পাতা:রায় দীনবন্ধু মিত্র বাহাদুরের জীবনী.djvu/৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
রায় দীনবন্ধু মিত্র বাহাদুরের জীবনী।

ঋণী। সুতরাং ঈশ্বরগুপ্তের কোন অপ্রশংসার কথা লিখিয়া আপনাকে অকৃতজ্ঞ বলিয়া পরিচয় দিতে ইচ্ছুক নহি। কিন্তু ইহাও অস্বীকার করিতে পারি না যে, এক্ষণকার পরিমাণ ধরিতে গেলে, ঈশ্বরগুপ্তের রুচি তাদৃশ বিশুদ্ধ বা উন্নত ছিল না, বলিতে হইবে। তাঁহার শিষ্যেরা অনেকেই তাঁহার প্রদত্ত শিক্ষা বিস্মৃত হইয়া অন্য পথে গমন করিয়াছেন। বাবু রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায় প্রভৃতির রচনামধ্যে ঈশ্বরগুপ্তের কোন চিহ্ন পাওয়া যায় না। কেবল দীনবন্ধুতেই কিয়ৎ-পরিমাণে তাঁহার শিক্ষার চিহ্ন পাওয়া যায়।

“এলোচুলে বেণে বউ আলতা দিয়ে পায়
নলক নাকে, কলসী কাঁকে, জল আন্‌তে যায়”

ইত্যাকার কবিতায় ঈশ্বরগুপ্তকে স্মরণ হয়। বাঙ্গালা সাহিত্যে চারিজন রহস্যপটু লেখকের নাম করা যাইতে পারে,—টেকচাঁদ, হুতোম, ঈশ্বরগুপ্ত এবং দীনবন্ধু। সহজেই বুঝা যায়, যে, ইহার মধ্যে দ্বিতীয় প্রথমের শিষ্য এবং চতুর্থ তৃতীয়ের শিষ্য। টেকচাঁদের সহিত হুতোমের যতদূর সাদৃশ্য, ঈশ্বরগুপ্তের সঙ্গে দীনবন্ধুর ততদূর সাদৃশ্য না থাকুক, অনেকদূর ছিল। প্রভেদ এই যে, ঈশ্বরগুপ্তের লেখায় ব্যঙ্গ (Wit) প্রধান; দীনবন্ধুর লেখায় হাস্য প্রধান। কিন্তু ব্যঙ্গ এবং হাস্য উভয়বিধ রচনায় দুই জনেই পটু ছিলেন,—তুল্য পটু ছিলেন না। হাস্যরসে ঈশ্বরগুপ্ত দীনবন্ধুর সমকক্ষ নহেন।

 আমি যতদূর জানি, দীনবন্ধুর প্রথম রচনা “মানব-চরিত্র” নামক একটী কবিতা। ঈশ্বরগুপ্তকর্ত্তৃক সম্পাদিত সাধুরঞ্জন-নামক সাপ্তাহিক পত্রে উহা প্রকাশিত হয়। অতি অল্প বয়সের লেখা, এজন্য ঐ কবিতায় অনুপ্রাসের অত্যন্ত আড়ম্বর। ইহাও, বোধ হয়, ঈশ্বরগুপ্তের প্রদত্ত শিক্ষার ফল। অন্যে ঐ কবিতা পাঠ করিয়া কিরূপ বোধ করিয়াছিলেন বলিতে পারি না, কিন্তু উহা আমাকে অত্যন্ত মোহিত করিয়া-