পাতা:রাশিয়ার চিঠি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

এই কাজে তারা নানা কুটিল পন্থা অবলম্বন করতে কুষ্ঠিত হয় নি, কারণ তারা চেয়েছিল সিদ্ধি, কীর্তি নয়।

 এই সময় ভারতবর্ষ তার বিপুল ঐশ্বর্যের জন্য জগতে বিখ্যাত ছিল—তখনকার বিদেশী ঐতিহাসিকেরা সে-কথা বারংবার ঘোষণা করে গেছেন। এমন কি স্বয়ং ক্লাইভ বলে গেছেন যে, “ভারতবর্ষের ধনশালিতার কথা যখন চিন্তা করে দেখি তখন অপহরণনৈপুণ্যে নিজের সংযমে আমি নিজেই বিস্মিত হই।” এই প্রভূত ধন কখনো সহজে হয় না—ভারতবর্ষ এ ধন উৎপন্ন করেছিল। তখন বিদেশ থেকে যারা এসে এখানকার রাজাসনে বসেছে তারা এ ধন ভোগ করেছে, কিন্তু নষ্ট করেনি। অর্থাৎ তারা ভোগী ছিল, কিন্তু বণিক ছিল না।

 তার পর বাণিজ্যের পথ সুগম করার উপলক্ষ্যে বিদেশী বণিকের তাদের কারবারের গদিটার উপরে রাজতক্ত চড়িয়ে বসল। সময় ছিল অনুকূল। তখন মোগলরাজত্বে ভাঙন ধরেছে, মারাঠিরা, শিখেরা এই সাম্রাজ্যের গ্রন্থিগুলো শিথিল করতে প্রবৃত্ত, ইংরেজের হাতে সেটা ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল ধ্বংসের পথে।

 পুর্বতন রাজগৌরবলোলুপেরা যখন এদেশে রাজত্ব করত তখন এদেশে অত্যাচার-অবিচার-অব্যবস্থা ছিল না এ-কথা বলা চলে না। কিন্তু তারা ছিল এদেশের অঙ্গীভূত। তাদের আঁচড়ে দেশের গায়ে যা ক্ষত হয়েছিল তা ত্বকের উপরে; রক্তপাত অনেক হয়েছে, কিন্তু অস্থি-বন্ধনীগুলোকে নড়িয়ে দেয় নি। ধন-উৎপাদনের বিচিত্র কাজ তখন অব্যাহত চলছিল, এমন কি নবাব-বাদশাহের কাছ থেকে সে-সমস্ত কাজ প্রশ্রয় পেয়েছে। তা যদি না হত তাহলে এখানে বিদেশী বণিকের ভিড় ঘটবার কোনো কারণ থাকত না,—মরুভূমিতে পঙ্গপালের ভিড় জমবে কেন।

৮৮