পাতা:রাশিয়ার চিঠি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 তার পরে ভারতবর্ষে বাণিজ্য ও সাম্রাজ্যের অশুভ সংগমকালে বণিক রাজা দেশের ধনকল্পতরুর শিকড়গুলােকে কী করে ছেদন করতে লাগলেন, সে-ইতিহাস শতবার-কথিত এবং অত্যন্ত শ্রুতিকটু। কিন্তু পুরাতন ন’লে সেটাকে বিস্মৃতির মুখটুলি চাপা দিয়ে রাখবার চেষ্টা চলবে না। এদেশের বর্তমান দুর্বহ দারিদ্র্যের উপক্রমণিকা সেইখানে। ভারতবর্ষের ধনমহিমা ছিল, কিন্তু সেটা কোন বাহনযোগে দ্বীপান্তরিত হয়েছে সে-কথা যদি ভুলি তবে পৃথিবীর আধুনিক ইতিহাসের একটা তত্ত্বকথা আমাদের এড়িয়ে যাবে। আধুনিক রাষ্ট্রনীতির প্রেরণাশক্তি বীর্যাভিমান নয়, সে হচ্ছে ধনের লােভ, এই তত্ত্বটি মনে রাখা চাই। রাজগৌরবের সঙ্গে প্রজাদের একটা মানবিক সম্বন্ধ থাকে, কিন্তু ধনলােভের সঙ্গে তা থাকতেই পারে না। ধন নির্মম, নৈর্ব্যক্তিক। যে-মুরগী সােনার ডিম পাড়ে লােভ যে কেবল তার ডিমগুলােকেই ঝুড়িতে তােলে তা নয়, মুরগীটাকে সুদ্ধ সে জবাই করে।

 বণিকরাজের লােভ ভারতের ধন উৎপাদনের বিচিত্র শক্তিকেই পঙ্গু করে দিয়েছে। বাকি রয়েছে কেবল কৃষি, নইলে কাঁচা মালের জোগান বন্ধ হয় এবং বিদেশী পণ্যের হাটে মূল্য দেবার শক্তি একেবারে নষ্ট হয়ে যায়। ভারতবর্ষের সদ্যপাতী জীবিকা এই অতিক্ষীণ বৃন্তের উপর নির্ভর করে আছে।

 এ-কথা মেনে নেওয়া যাক তখনকার কালে যে-নৈপুণ্য ও যে-সকল উপায়ের যােগে হাতের কাজ চলত ও শিল্পীরা খেয়েপরে বাঁচত যন্ত্রের প্রতিযােগিতায় তারা স্বতই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। অতএব প্রজাদের বাঁচাবার জন্যে নিতান্তই প্রয়ােজন ছিল সর্বপ্রযত্নে তাদের যন্ত্রকুশল ক’রে তোলা। প্রাণের দায়ে বর্তমান কালে সকল দেশেই এই উদ্যোগ প্রবল। জাপান অল্পকালের মধ্যে ধনের যন্ত্রবাহনকে আয়ত্ত করে নিয়েছে, যদি

৮৯