পাতা:রাশিয়ার চিঠি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

অনিচ্ছুক কিন্তু অতীত ও বতর্মানের প্রচলিত শাসননীতির সঙ্গে তুলনা করে দেখলে কথাটাকে অত্যুক্তি বলতে পারব না। মার খেয়েছি, অন্যায় মারও যথেষ্ট খেয়েছি এবং সব-চেয়ে কলঙ্কের কথা গুপ্ত মার, তারও অভাব ছিল না। এ-কথাও বলব, অনেক স্থলেই যারা মার-খেয়েছে মাহাত্ম্য তাদেরই, যারা মেরেছে তারা আপন মান খুইয়েছে। কিন্তু সাধারণ রাষ্ট্রশাসন-নীতির আদর্শে আমাদের মারের মাত্রা ন্যূনতম বই কি। বিশেষত আমাদের ’পরে ওদের নাড়ীর টান নেই, তা ছাড়া সমস্ত ভারতবর্ষকে জালিয়ানওআলাবাগ করে তােলা এদের পক্ষে বাহুবলের দিক থেকে অসম্ভব ছিল না। আমেরিকার সমগ্র নিগ্রোজাতি যুক্ত-রাজ্যের সঙ্গে নিজেদের যােগ বিচ্ছিন্ন করবার জন্যে যদি স্পর্ধাপূর্বক অধ্যবসায়ে প্রবৃত্ত হ’ত তাহলে কী রকম বীভৎসভাবে রক্তপ্লাবন ঘটত বর্তমান শান্তির অবস্থাতেও তা অনুমান করে নিতে অধিক কল্পনাশক্তির প্রয়ােজন হয় না। তা ছাড়া ইটালি প্রভৃতি দেশে যা ঘটেছে তা নিয়ে আলােচনা করা বাহুল্য।

 কিন্তু এতে সান্ত্বনা পাই নে। যে-মার লাঠির ডগায় সে-মার দু-দিন পরে ক্লান্ত হয়ে পড়ে, এমন কি, ক্রমে তার লজ্জা আসাও অসম্ভব নয়। কিন্তু যে-মার অন্তরে অন্তরে সে তাে কেবল কতকগুলো মানুষের মাথা ভেঙে তার পরে খেলাঘরের ব্রিজ-পার্টির অন্তরালে অধর্থন করে না। সমস্ত জাতকে সে যে ভিতরে ভিতরে ফতুর করে দিলে। শতাব্দীর পর শতাব্দী তার তো বিরাম নেই। ক্রোধের মার থামে, লােভের মারের অন্ত পাওয়া যায় না।

 টাইম্‌স্-এর সাহিত্যিক ক্রোড়পত্রে দেখা গেল Mackee নামক এক লেখক বলেছেন যে, ভারতে দারিদ্র্যের root cause মূল কারণ হচ্ছে এদেশে নির্বিচার বিবাহের ফলে অতিপ্রজন। কথাটার ভিতরকার

৯২