পাতা:রাশিয়ার চিঠি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 দেশের লােকের দৈহিক ও মানসিক অবস্থার চরম দুঃখদৃশ্য অনেককাল স্বচক্ষে দেখে আসছি। দারিদ্রে মানুষ কেবল যে মরে তা নয়, নিজেকে অবজ্ঞার যােগ্য করে তােলে। তাই সার্ জন সাইমন বললেন যে:

 “In our view the most formidable of the evils from which India is suffering have their roots in social and economic customs of long-standing which can only be remedied by the action of the Indian people themselves.”

 এটা হল অবজ্ঞার কথা। ভারতের প্রয়ােজনকে তিনি যে-আদর্শ থেকে বিচার করছেন সেটা তাঁদের নিজেদের আদর্শ নয়। প্রচুর ধন-উৎপাদনের জন্যে যে অবারিত শিক্ষা যে সুযােগ যে স্বাধীনতা তাদের নিজেদের আছে, যে-সমস্ত সুবিধা থাকাতে তাঁদের জীবনযাত্রার আদর্শ জ্ঞানে কর্মে ভােগে নানাদিক থেকে প্রভূতপরিমাণে পরিপুষ্ট হতে পেরেছে, জীর্ণবস্ত্র শীর্ণতনু রােগক্লান্ত শিক্ষাবঞ্চিত ভারতের পক্ষে সে-আদর্শ কল্পনার মধ্যেই আনেন না,—আমরা কোনােমতে দিনযাপন করব লােকবৃদ্ধি নিবারণ করে এবং খরচপত্র কমিয়ে, আর আজ তাঁরা নিজের জীবিকায় যে পরিস্ফীত আদর্শ বহন করছেন তাকে চিরদিন বহুল পরিমাণে সম্ভব করে রাখব আমাদের জীবিকা খর্ব করে। এর বেশি কিছু ভাববার নেই, অতএব রেমেডির দায়িত্ব সম্পূর্ণ আমাদেরই হাতে, যারা রেমেডিকে দুঃসাধ্য করে তুলেছে তাদের বিশেষ কিছু করার নেই।

 মানুষ এবং বিধাতার বিরুদ্ধে এই সমস্ত নালিশ ক্ষান্ত করে রেখেই অন্তরের দিক থেকে আমাদের নির্জীক পল্লীর মধ্যে প্রাণসঞ্চার করবার জন্যে আমার অতিক্ষুদ্র শক্তিকে কিছুকাল প্রয়ােগ করছি। এ-কাজে গবর্মেণ্টের আনুকূল্য আমি উপেক্ষা করি নি, এমন কি ইচ্ছা করেছি।

৯৬