পাতা:রাশিয়ার চিঠি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

যেজন্যে বিদেশী শাসননীতিতে তাঁরা কিছু কিছু ভুল ক’রে বসেন, শাসনের ঠাসবুনানিতে কিছু কিছু খেই হারায়, নইলে আমাদের মুখ ফুটতে হয়তাে আরাে এক-আধ শতাব্দী দেরি হত।

 এ-কথা অস্বীকার করবার জো নেই যে, শিক্ষার অভাবে অশক্তি অটল হয়ে থাকে, অতএব অশিক্ষা পুলিসের ডাণ্ডার চেয়ে কম বলবান নয়। বােধ হয় যেন লর্ড কার্জন সে-কথাটা কিছু কিছু অনুভব করেছিলেন। শিক্ষাদান সম্বন্ধে ফরাসী পাণ্ডিত্যব্যবসায়ী স্বদেশের প্রয়ােজনকে যে-আদর্শে বিচার করে থাকেন, শাসিত দেশের প্রয়ােজনকে সে-আদর্শে করেন না। তার একমাত্র কারণ লােভ। লোভের বাহন যারা তাদের মনুষ্যত্বের বাস্তবতা লুব্ধের পক্ষে অস্পষ্ট, তাদের দাবিকে আমরা স্বভাবতই খর্ব করে থাকি। যাদের সঙ্গে ভারতের শাসনের সম্বন্ধ তাদের কাছে ভারতবর্ষ আজ দেড়-শ বৎসর খর্ব হয়ে আছে। এইজন্যেই তার মর্মগত প্রয়ােজনের পরে উপরওআলার ঔদাসীন্য ঘুচল না। আমরা যে কী অন্ন খাই, কী জলে আমাদের পিপাসা মেটাতে হয়, কী সুগভীর অশিক্ষায় আমাদের চিত্ত তমসাবৃত তা আজ পর্যন্ত ভালাে করে তাদের চোখে পড়ল না। কেননা, আমরাই তাদের প্রয়ােজনের এইটেই বড়ো কথা, আমাদেরও যে প্রাণগত প্রয়ােজন আছে এ-কথাটা জরুরি নয়। তা ছাড়া আমরা এত অকিঞ্চিৎকর হয়ে আছি যে, আমাদের প্রয়ােজনকে সম্মান করাই সম্ভব হয় না।

 ভারতের যে কঠিন সমস্যা, যাতে করে আমরা এতকাল ধরে ধনে প্রাণে মনে মরেছি, এ সমস্যাটা পাশ্চাত্ত্যে কোথাও নেই। সে-সমস্যাটি এই যে, ভারতের সমস্ত স্বত্ব দ্বিধাকৃত ও সেই সর্বনেশে বিভাগের মূলে আছে লােভ। এই কারণে রাশিয়ায় এসে যখন সেই লােভকে তিরস্কৃত

১০০