পাতা:রাশিয়ার চিঠি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

করে বলে মানুষ যে-শক্তি পায় আমি তার কথা বলি না। মানুষের সম্বন্ধ যখন চারিদিকের প্রতিবেশীর মধ্যে, যখন আপন ঘরে এবং আপন ঘরের বাইরে ব্যাপ্ত হয় তখন সে-সম্বন্ধের বৃহত্ত্ব মানুষকে আপনি আনন্দ দেয়। আমাদের গভীর পরিতৃপ্তি সেখানে যেখানে কেবলমাত্র ব্যবহারিক সম্বন্ধ নয়, সুযােগ-সুবিধার সম্বন্ধ নয়, ব্যবসার সম্বন্ধ নয়, কিন্তু সকলরকম স্বার্থের অতীত আত্মীয়সম্বন্ধ। সেখানে মানুষ আর-সমস্ত থেকে বঞ্চিত হতে পারে, কিন্তু মানব-আত্মার তৃপ্তি তার প্রচুর-পরিমাণে হয়।

 বিদেশে আমাকে অনেক জিজ্ঞাসা করেছেন—যাকে ওঁরা happiness বলেন, আমরা বলি সুখ, এর আধার কোথায়। মানুষ সুখী হয়, সেখানেই যেখানে মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্বন্ধ সত্য হয়ে ওঠে— এ-কথাটি বলাই বাহুল্য। কিন্তু আজকের দিনে এটা বলার প্রয়ােজন হয়েছে। কেননা, এই সম্বন্ধকে বাদ দিয়ে যেখানে ব্যবসাঘটিত যােগ সেখানে মানুষ এত প্রচুর ফললাভ করে, বাইরের ফল— এত তাতে মুনফা হয়, এত রকম সুযােগসুবিধা মানুষ পায় যে মানুষের বলবার সাহস থাকে না, এটাই সভ্যতার চরম বিকাশ নয়। এত পায়! এত তার শক্তি! যন্ত্রযােগে যে-শক্তি প্রবল হয়ে ওঠে তার দ্বারা এমনি করে সমস্ত পৃথিবীকে সে অভিভূত করেছে, বিদেশের এত লােককে তার নিজের দাসত্বে ব্রতী করতে পেরেছে—তার এত অহংকার। আর সেই সঙ্গে এমন অনেক সুযােগসুবিধা আছে যা বস্তুত মানুষের জীবনযাত্রার পথে অত্যন্ত অনুকূল। সেগুলি ঐশ্বর্যযােগে উদ্ভূত হয়েছে। এগুলিকে চরম লাভ বলে মানুষ সহজেই মনে করে। না মনে ক’রে থাকতে পারে না। এর কাছে সে বিকিয়ে দিয়েছে মানুষের সকলের চেয়ে বড়ো জিনিস, সে হল মানবসম্বন্ধ।

১১৯