পাতা:রাশিয়ার চিঠি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

মধ্যে যদি বিচ্ছিন্নতা ঘটে তবে তাে মরণদশা। সেই দশা আমাদের সমাজে। দেশকে মুক্তিদান করবার জন্যে আজ যারা উৎকট অধ্যবসায়ে প্রবৃত্ত এমন-সব লােকের মধ্যেও দেখা যায়, সমাজের মধ্যে গুরুতর ভেদ যেখানে, যেখানে পক্ষাঘাতের লক্ষণ, সেখানে তাদের দৃষ্টিই পড়ে না। থেকে থেকে বলে ওঠেন, কিছু করা চাই; কিন্তু কণ্ঠের সঙ্গে সঙ্গে হাত এগােয় না। দেশ সম্বন্ধে আমাদের যে উদ্যোগ তার থেকে দেশের লােক বাদ পড়ে। এটা আমাদের এতই অভ্যস্ত হয়ে গেছে যে, এর বিপুল বিড়ম্বনা সম্বন্ধে আমাদের বােধ নেই। একটা তার দৃষ্টান্ত দিই।

 আমাদের দেশে আধুনিক শিক্ষাবিধি বলে একটা পদার্থের আবির্ভাব হয়েছে। তারই নামে স্কুলকলেজ ব্যাঙের ছাতার মতো ইতস্তত মাথা তুলে উঠেছে। এমন ভাবে এটা তৈরি যে, এর আলাে কলেজি মণ্ডলের বাইরে অতি অল্পই পৌছয়—সূর্যের আলাে চাঁদের আলােয় পরিণত হয়ে যতটুকু বিকীর্ণ হয় তার চেয়েও কম। বিদেশী ভাষার স্থূল বেড়া তার চারদিকে। মাতৃভাষার যােগে শিক্ষাবিস্তার সম্বন্ধে যখন চিন্তা করি সে-চিন্তার সাহস অতি অল্প। সে যেন অন্তঃপুরিকা বধূর মতােই ভীরু। আঙিনা পর্যন্তই তার অধিকার, তার বাইরে চিবুক পেরিয়ে তার ঘােমটা নেমে পড়ে। মাতৃভাষার আমল প্রাথমিক শিক্ষার মধ্যেই, অর্থাৎ সে কেবল শিশুশিক্ষারই যােগ্য— অর্থাৎ মাতৃভাষা ছাড়া অন্য কোনাে ভাষা শেখবার সুযােগ নেই, সেই বিরাট জনসংঘকে বিদ্যার অধিকার সম্বন্ধে চিরশিশুর মতােই গণ্য করা হয়েছে। তারা কোনােমতেই পুরাে মানুষ হয়ে উঠবে না অথচ স্বরাজ সম্বন্ধে তারা পুরাে মানুষের অধিকার লাভ করবে, চোখ বুজে এইটে আমরা কল্পনা করি।

১২৮