পাতা:রাশিয়ার চিঠি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

হালকা। রাজার ইচ্ছা কেবল যদি শাসনের ইচ্ছা হয়, শোষণের ইচ্ছা না হয়, তবে তাকে স্বীকার করেও মােটের উপর সমস্ত দেশ আপন স্বাতন্ত্র্য ও আত্মসম্মান রাখতে পারে। কিন্তু ধনিকের শাসনে আমাদের গােটা দেশ আর-একটি গােটা দেশের পণ্যদ্রব্যে পরিণত। আমরা লােভে জিনিস, আত্মীয়তার না, গৌরবের না।”

 “এই যে কথাগুলি ভাবছ এবং বলছ, এই যে সমষ্টিগতভাবে জাতীয় আত্মসম্মানের জন্যে তােমার আগ্রহ,তার কি কারণ এই নয় যে,জাপানের প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়ে তােমরা আধুনিক যুগের রাষ্ট্রিক শিক্ষায় দীক্ষিত।”

 কোরীয় যুবক দ্বিধার ভাবে চুপ করে রইলেন।

 আমি বললুম,“চেয়ে দেখে সামনে ঐ চীনদেশ। সেখানে জাতীয় আত্মসম্মানবােধ শিক্ষার অভাবে দেশের জনসাধারণের মধ্যে অপ্রবুদ্ধ। তাই দেখি, ব্যক্তিগত ক্ষমতাপ্রাপ্তির দুরাশায় সেখানে কয়েকজন লুব্ধ লােকের হানাহানি-কাটাকাটির ঘূর্ণিপাক। এই নিয়ে লুটপাট-অত্যাচারে ডাকাতের হাতে, সৈনিকের হাতে, হতভাগ্য দেশ ক্ষতবিক্ষত, রক্তে প্লাবিত, অসহায়ভাবে দিনরাত সন্ত্রস্ত। শিক্ষার জোরে যেখানে সাধারণ লােকের মধ্যে স্বাধিকারবোেধ স্পষ্ট না হয়েছে সেখানে স্বদেশী বা বিদেশী দুরাকাঙ্ক্ষীদের হাতে তাদের নির্যাতন ঠেকাবে কিসে। সে-অবস্থায় তারা ক্ষমতালােলুপের স্বার্থসাধনের উপকরণমাত্র হয়ে থাকে। তুমি তােমার দেশকে ধনীর উপকরণদশাগ্রস্ত বলে আক্ষেপ করছিলে, সেই পরের উপকরণদশা তাদের কিছুতেই ঘােচে না যারা মূঢ়, যারা কাপুরুষ, ভাগ্যের মুখপ্রত্যাশী, যারা, আত্ম-কর্তৃত্বে আস্থাবান নয়। কোরিয়ার অবস্থা জানি নে, কিন্তু সেখানে নবযুগের শিক্ষার প্রভাবে যদি সাধারণের মধ্যে স্বাধিকারবােধের অঙ্কুরমাত্র উদ্গত হয়ে থাকে তবে সে শিক্ষা কি জাপানের কাছ থেকেই পাও নি।”

১৩৬