পাতা:রাশিয়ার চিঠি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

মধ্যে শিক্ষা হুহু করে এগিয়ে চলেছে আমি ভেবেছিলুম সে-শিক্ষা বুঝি সামান্য একটুখানি পড়া ও লেখা ও অঙ্ক কষা—কেবলমাত্র মাথা-গুনতিতেই তার গৌরব। সেও কম কথা নয়। আমাদের দেশে তাই হলেই রাজাকে আশীর্বাদ করে বাড়ি চলে যেতুম। কিন্তু এখানে দেখলুম, বেশ পাকা-রকমের শিক্ষা, মানুষ করে তােলবার উপযুক্ত, নােট মুখস্ত করে এম. এ. পাস করবার মত নয়।

 কিন্তু এসব কথা আর-একটু বিস্তারিত করে পরে লিখব, আজ আর সময় নেই। আজই সন্ধ্যাবেলায় বার্লিন অভিমুখে যাত্রা করব। পরে ৩রা অক্টোবর আটলাণ্টিক পাড়ি দেব—কতদিনের মেয়াদ আজও নিশ্চিত করে বলতে পারছি নে।

 কিন্তু শরীরমন কিছুতে সায় দিচ্ছে না—তবু এবারকার সুযােগ ছাড়তে সাহস হয় না—যদি কিছু কুড়িয়ে আনতে পারি তাহলেই বাকি যে-কটা দিন বাঁচি বিশ্রাম করতে পারব। নইলে দিনে দিনে মূলধন খুইয়ে দিয়ে অবশেষে বাতি নিবিয়ে দিয়ে বিদায় নেওয়া সেও মন প্ল্যান নয়—সামান্য কিছু উচ্ছিষ্ট ছড়িয়ে রেখে গেলে জিনিষটা নােংরা হয়ে উঠবে। সম্বল যতই কমে আসতে থাকে মানুষের আন্তরিক দুর্বলতা ততই ধরা পড়ে—ততই শৈথিল্য, ঝগড়াঝাঁটি, পরস্পরের বিরুদ্ধে কানা- কানি। ঔদার্য, ভরা-উদরের উপরে অনেকটা নির্ভর করে। কিন্তু যেখানেই যথার্থ সিদ্ধির একটি চেহারা দেখতে পাই সেখানেই দেখা যায় সেটা কেবলমাত্র টাকা দিয়ে হাটে কেনবার নয়—দারিদ্র্যের জমিতেই সে সােনার ফসল ফলায়। এখানকার শিক্ষা-ব্যবস্থার যে অক্লান্ত উদ্যম, সাহস, বুদ্ধিশক্তি, যে আত্মােৎসর্গ দেখলুম আর অতি অল্প পরিমাণ থাকলেও কৃতার্থ হতুম। আন্তরিক শক্তি ও অকৃত্রিম উৎসাহ যত কম থাকে টাকা খুঁজতে হয় ততই বেশি করে। ইতি ২৫শে সেপ্টেম্বর, ১৯৩০।

১৫