পাতা:রূপসী বোম্বেটে - দীনেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রথম পরিচ্ছেদ
১১৯

তাহার হৃদয়ে ক্ষীণ আশার সঞ্চার হইল। সে যথাসাধ্য চীৎকার। করিয়া জাহাজের লোকজনকে ডাকিতে লাগিল। কিন্তু তাহার বিদীর্ণ কণ্ঠের আর্ত্তনাদ জাহাজস্থ কোনও লোকের কর্ণগোচর হইল না। কেবল সেই জাহাজের ডেকে উপবিষ্ট ‘টাইগার’ বহু দূরে থাকিয়াও সেই স্বরের আভাস পাইয়াছিল; তাই সে সমুদ্রের দিকে চাহিয়া কাতর। স্বরে চীৎকার করিতেছিল, এবং স্মিথের কণ্ঠস্বরের প্রতি মিঃ ব্লেকের দৃষ্টি আকৃষ্ট করিবার চেষ্টা করিতেছিল।—উহাই মিঃ ব্লেকের জাহাজ ‘কর্সেয়ার। কর্সেয়ার’ দ্রুতবেগে তাহার গন্তব্য পথে চলিয়া গেল; আলোক অদৃশ্য হইল।—স্মিথের হৃদয় আবার নিরাশার, অন্ধকারে নিমজ্জিত হইল।

 এই ভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়া গেল। ক্রমে পূর্ব্বাকাশ পরিষ্কার হইল; সমুদ্রবক্ষে উষালোক প্রতিবিম্বিত হইল। স্মিথের আর হাত পা নাড়িবার শক্তি রহিল না, সে চতুর্দ্দিকে ধূমময় দেখিতে লাগিল; সেই অবস্থায় তাহার বোধ হইল, দুরে একখানি জাহাজ পাল তুলিয়া মুক্তপক্ষ বিহঙ্গের ন্যায় সেই দিকে অগ্রসর হইতেছে। সে পুনর্ব্বার ভগ্নস্বরে সাহায্য প্রার্থনা করিল; কিন্তু তাহার কণ্ঠরোধ হইয়া আসিয়াছিল, তাহার বিদীর্ণ কণ্ঠের আর্ত্তনাদ দূরবর্ত্তী জাহাজে পহুছিল না। সে নিতান্ত নির্জ্জীব হইয়া পড়িয়াছিল, কয়েক ঢোক লোনা জল উদরস্থ হওয়ায় সে অত্যন্ত যন্ত্রণা অনুভব করিল; তাহার শ্বাস রুদ্ধ হইয়া আসিল; শেষে তাহার সংজ্ঞা বিলুপ্ত হইল। অরুণকিরণে পূর্ব্ব গগন সুরঞ্জিত হইবার পূর্বেই তাহার অসাড় দেহ তরঙ্গাভিঘাতে সমুদ্রের নীল জলে ভাসিয়া চলিল।—তাহার দেহের সমস্ত ভার ‘লাইফ-বেল্টের’ উপর না পড়িলে হয় ততক্ষণ সে আটলাণ্টিকের অতলস্পর্শ গর্ভে অদৃশ্য হইত।—স্মিথের স্বর্ণাভ কেশদামে,