পাতা:রোগশয্যায়-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/২০

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
রােগশয্যায়

হে প্রাচীন তমস্বিনী,
আজি আমি রােগের বিমিশ্র তমিস্রায়
মনে মনে হেরিতেছি
কালের প্রথম কল্পে নিরন্তর অন্ধকারে
বসেছ সৃষ্টির ধ্যানে
কী ভীষণ একা,
বােবা তুমি, অন্ধ তুমি।
অসুস্থ দেহের মাঝে ক্লিষ্ট রচনার যে প্রয়াস
তাই হেরিলাম আমি
অনাদি আকাশে।
পঙ্গু উঠিতেছে কাঁদি নিদ্রার অতল মাঝে,
আত্মপ্রকাশের ক্ষুধা বিগলিত লৌহগর্ভ হতে
গােপনে উঠিছে জ্বলি শিখায় শিখায়।
অচেতন তােমার অঙ্গুলি
অস্পষ্ট শিল্পের মায়া বুনিয়া চলিছে,
আদি মহার্ণব-গর্ভ হতে
অকস্মাৎ ফুলে ফুলে’ উঠিতেছে—
প্রকাও স্বপ্নের পিণ্ড
বিকলাঙ্গ অসম্পূর্ণ,
অপেক্ষা করিছে অন্ধকারে
কালের দক্ষিণ হস্তে পাবে কবে পূর্ণ দেহ
বিরূপ কদর্য নেবে সুসংগত কলেবর
নব সূর্যালােকে।
মূর্তিকার দিবে আসি মন্ত্র পড়ি’
ধীরে ধীরে উদ্ঘাটিবে বিধাতার অন্তর্গূঢ় সংকল্পের ধারা॥

জোড়াসাঁকো
১৩ নভেম্বর, ১৯৪০
প্রাতে