পাতা:লুকোচুরি - প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দারােগার দপ্তর, ১৯৬ সংখ্যা।




 কতক্ষণ নিদ্রিত ছিলাম বলিতে পারি না। এক কনষ্টেবলের বিকট চীৎকারে আমার নিদ্রাভঙ্গ হইল। চক্ষু উন্মীলন করিয়া দেখি, থানার সম্মুখেই একখানি ভাড়াটিয়া গাড়ী দাঁড়াইয়া রহিয়াছে এবং এক ভদ্র-যুবক সেই গাড়ী হইতে অবতরণ করিতেছেন।

 যুবককে আমার গৃহে লইয়া যাইতে বলিয়া আমি গাত্রোত্থান করিলাম। তখন ঊষার আলোকে চারিদিক উদ্ভাসিত হইয়াছিল, উচ্চবৃক্ষশিরে স্বর্ণাভ সূর্য্যরশ্মি প্রতিবিম্বিত হইয়া নবোদ্গত পত্রগুলিকে স্নেহময় করিয়াছিল। বিহঙ্গমকুল আপন আপন কুলায় ত্যাগ করিয়া আহারান্বেষণে নিযুক্ত হইয়াছিল এবং রাখালগণ গোধন লইয়া ধীরে ধীরে মাঠের দিকে ধাবমান হইতেছিল।

 তখনই আমি প্রাতঃকৃত্য সমাপন করিয়া অফিস-ঘরে প্রবেশ করিলাম। দেখিলাম, যুবকের বয়স প্রায় আটাইশ বৎসর। তাঁহাকে দেখিতে শ্যামবর্ণ; হৃষ্টপুষ্ট, বলিষ্ঠ, নাতিদীর্ঘ ও নাতিখর্ব্ব। মুখ অতি সুন্দর, অঙ্গসৌষ্ঠব অতি চমৎকার।

 আমি গৃহ মধ্যে প্রবেশ করিবামাত্র যুবক আসন ত্যাগ করিয়া দণ্ডায়মান হইলেন এবং আমাকে অতি বিনীতভাবে নমস্কার করিলেন। তাঁহাকে উপবেশন করিতে অনুরোধ করিয়া আমি তাঁহার সম্মুখস্থ একখানি চেয়ারে বসিয়া পড়িলাম। পরে জিজ্ঞাসা করিলাম, “মহাশয়ের নাম কি? কি অভিপ্রায়ে এমন সময়ে এখানে আসিয়াছেন?”

 যুবক বিনীতভাবে উত্তর করিলেন, “আমার নাম অনাথনাথ মুখোপাধ্যায়। বিষম বিপদে পড়িয়াই আপনার শরণ লইয়াছি।”

 আমি আশ্চর্য্যান্বিত হইয়া জিজ্ঞাসা করিলাম, “কি বিপদ স্পষ্ট করিয়া না বলিলে আপনার কোন উপকার করিতে পারিব না।”