পাতা:লুকোচুরি - প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
লুকোচুরি।

 অনাথ বাবু ঈষৎ লজ্জিত হইলেন। তিনি বলিলেন, “যদি অনুগ্রহ করিয়া একবার আমাদের বাড়ীতে পদধূলি দেন, তাহা হইলে আমার স্ত্রীর মুখে সকল কথাই শুনিতে পাইবেন। কোথা হইতে একখানি পত্র পাইয়া তিনি ভয়ানক ভীত হইয়াছেন।”

 আগন্তুকের অনুরোধ এড়াইতে পারিলাম না। আমি তখনই তাহার কথায় সম্মত হইলাম এবং যে গাড়ী করিয়া তিনি থানায় আসিয়াছিলেন, সেই গাড়ীতে গিয়া উপবেশন করিলাম।

 শিয়ালদহ ষ্টেশন হইতে কিছুদূরে অনাথনাথের বাড়ী; অর্ধ ঘণ্টার মধ্যেই আমরা সেখানে গিয়া উপস্থিত হইলাম। অনাথনাথের বাড়ীখানি দ্বিতল এবং নিতান্ত ক্ষুদ্র নহে। বাড়ীখানি দ্বি-মহল। অনাথনাথ আমাকে প্রথম মহলের দ্বিতলস্থ বৈঠকখানায় লইয়া গেলেন এবং অতি যত্নের সহিত সেই স্থানে বসিতে বলিলেন।

 বৈঠকখানা ঘরটী দৈর্ঘ্যে প্রস্থে দশ হাতের কম নহে। ঘরের ভিতর ঢালা-বিছানা,—প্রথমে মাদুর, তাহার উপর সতরঞ্চ, তাহার উপর একখানি অতি শুভ্র চাদর। বিছানার চারিদিকে চারিটা তাকিয়া, মধ্যস্থলে দুইটা বৈঠকের উপর দুইটা রূপা বাঁধান হুকা। ঘরের দেওয়ালে কয়েকখানি হিন্দু-দেবদেবীর ছবি, মধ্যে মধ্যে এক একটী জোড়া দেওয়ালগিরি।

 আমাকে সেই ঘরে বসিতে বলিয়া অনাথনাথ অন্দরে গমন করিলেন এবং কিছুক্ষণ পরেই ফিরিয়া আসিয়া বলিলেন, “আমার স্ত্রী পার্শ্বের ঘরে আসিয়াছেন। দুইটী গৃহের মধ্যে যে দরজা আছে, সেইটী খুলিয়া দিতেছি। তাহা হইলে তিনি আমাদিগের কথাবার্তা শুনিতে পাইবেন এবং আবশ্যক হইলে সংশোধন করিতে পারিবেন।”