পাতা:লোকরহস্য-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গর্দভ ছে গর্দভ। অামার প্রদত্ত, এই নবীন তৃণ সকল ভোজন করুন।১। আমি বস্থযত্নে, গোবৎসাদির অগম্য প্রান্তর সকল হইতে, নবজলকণানিষেকসুরভি তৃণাগ্রভাগ সকল আহরণ করিয়া আনিয়াছি, আপনি সুন্দর বদনমণ্ডলে গ্রহণ করিয়া, মুক্তানিন্তি দন্তে ছেদনপূর্বক আমার প্রতি কৃপাবান ইউন। হে মহাভাগ। আপনার পূজা করিব ইচ্ছা হইয়াছে; কেন না, আপনাকেই সৰ্ব্বত্র দেখিতে পাই। অতএব হে বিশ্বব্যাপিম্‌ ! আমার পূজা গ্রহণ করুন। আমি পূজ্য ব্যক্তির অনুসন্ধানে প্রবৃত্ত হইয়া, নানা দেশে নানা স্থানে পরিভ্রমণ করিয়া দেখিলাম, আপনি সৰ্ব্বত্রই বসিয়া আছেন, সকলেই আপনার পূজা করি তছে। অতএব হে দীর্ঘকর্ণ। আমারও পূজা গ্রহণ করুন। হে গর্দভ ! কে বলে তোমার পদগুলি ক্ষুদ্র । যেখানে সেখানে তোমারই বড় পদ, দেখিয়া থাকি। তুমি উচ্চাসনে বসিয়া, স্তাবকগণে পরিবৃত হইয়া, মোটা মোটা ঘাসের আঁটি খাইয়া থাক। লোকে তোমার শ্রবণেন্দ্রিয়ের প্রশংসা করে । তুমিই বিচারাসনে উপবেশন করিয়া, মহাকর্ণদ্বয় ইতস্তত: সঞ্চালন করিতেছ। তাহার অগাধ গহবর দেখিতে পাইয়া, উকীল নামক কবিগণ নানাবিধ কাব্যরস তন্মধ্যে ঢালিয়া দিতেছে। তখন তুমি শ্রবণতৃপ্তিমুখে অভিভূত হইয়া নিদ্রা গিয়া থাক। হে বৃহন্মুও। তখন সেই কাব্যরসে আর্দ্রীভূত হইয়া, তুমি দয়াময় হইয়া, অসীম দয়ার প্রভাবে রামের সর্বস্ব শু্যামকে দাও, শুীমের সর্বস্ব কানাইকে দাও ; তোমার দয়ার পার নাই। হে রক্তকগ্ৰহভূষণ । কখনও দেখিয়াছি, তুমি লাঙ্গুল সঙ্গোপনপূর্বক কাষ্ঠাসনে উপবেশন করিয়া, সরস্বতীমণ্ডপ মধ্যে বঙ্গীয় বালকগণকে গর্দভলোক প্রাপ্তির উপায় বলিয়া দিতেছ। বালকের গর্দভলোকে প্রবেশ করিলে, “প্রবেশিকায় উত্তীর্ণ হইল” বলিয়া, মহা গর্জন করিয়া থাক। শুনিয়া আমরা ভয় পাই । হে প্রকাণ্ডোদর । তুমিই চতুষ্পাঠীমধ্যে কুশাসনে উপবেশন করিয়া, তৈলনিষিক্ত ললাটপ্রাস্তরে চন্দনে নদী অঙ্কিত করিয়া, তুলটহস্তে শোভা পাও। তোমার কৃত শাস্ত্রের ব্যাখ্যা শুনিয়া আমরা ধন্ত ধষ্ঠ করিতেছি। অতএব হে মহাপশে । আমার প্রদত্ত কোমল তৃণাঞ্জুর ভোজন কর।