লোকরহস্ত s পোর্টমাণ্টে বহিয়া যাইতেছিল। পথিমধ্যে কালীকান্তবাবু দেখিলেন, একটি স্বর্ণগোলক পড়িয়া আছে। বিস্মিত হইয় তাহ উঠাইয়া লইলেন। দেখিলেন, সুবৰ্ণ বটে। ঐত হইয় তাহ ভূত্য রামাকে রাখিতে দিলেন ; বলিলেন, “এটা সোণার দেখিতেছি। কেহ হারাইয়া থাকিবে। যদি কেহ খোজ করে, বাহির করিয়া দিব। নহিলে বাড়া লইয়। বাইব । এখন রাখ।" রামা বস্ত্রমধ্যে গোলকটি লুকাইয় রাখিবার অভিপ্রায়ে, পথে পোর্টমাণ্টে নামাইল । পরে কালীকাস্তবাবুর হস্ত হইতে গোলকটি গ্রহণ করিয়া বস্ত্রমধ্যে লুকাইল । কিন্তু রাম আর পোর্টমাটাে মাথায় তুলিল না। কালাকাস্তবাবু স্বয়ং তাহা উঠাইয়া মাথায় করিলেন। রাম অগ্রসর হইয়া চলিল, বাবু মোট মাথায় পশ্চাৎ পশ্চাৎ চলিলেন। তখন রাম বলিল, “ওরে রামা s” বাবু বলিলেন, “আজ্ঞা ” સ્વા রামা বলিল, “তুই বড় বেআদব, দেখিস্ যেন আমার শ্বশুরবাড়ী গিয়া বেআদবি করিসূ না। তাহারা ভদ্রলোক।” বাবু বলিলেন, “আজ্ঞে তা কি পারি? আপনি হচ্ছেন মুনিব—আপনার কাছে কি বেআদবি করিতে পারি ” কৈলাসে গৌরী বলিলেন, “প্রভো, আমি ত কিছুই বুঝিতে পারিতেছি না। আপনার স্বর্ণগোলকের কি গুণ এ ?” মহাদেব বলিলেন, “গোলকের গুণ চিত্তবিনিময়। আমি যদি নন্দীর হাতে এই গোলক দিই, তবে নন্দী ভাবিবে, আমি মহাদেব, আমাকে ভাবিবে নন্দী ; আমি ভাবিব, আমি নন্দী, নন্দীকে ভাবিব মহাদেব। রাম ভাবিতেছে, আমি কালীকান্ত বসু, কালীকান্তকে ভাবিতেছে, এ রাম চাকর। কালীকান্ত ভাবিতেছে, আমি রাম খানসাম, রামাকে ভাবিতেছে, কালীকান্তবাবু।” কালীকান্তবাবু যখন শ্বশুরবাড়ী পৌছিলেন, তখন তাহার শ্বশুর অন্তঃপুরে। কিন্তু বাহিরে একটা গণ্ডগোল উঠিল। দ্বারবান রামদীন পাড়ে বলিতেছে, “আরে ও খানসামাজি, তোম হয়। মৎ বইঠিও—তোম হামারা পাশ আও।” শুনিয়া রাম। গরম হইয়া, চক্ষু রক্তবর্ণ করিয়া বলিতেছে, “য বেটা মেছুয়াবাদী যা—তোর আপনার কাজ করগে।”
পাতা:লোকরহস্য-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৫৭
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
