পাতা:লোকরহস্য-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কোন “ম্পেশিয়ালের পত্র ৬১ আর পৃথিবীতে কোথাও জন্মগ্রহণ করে নাই। ঈশ্বর আমাদিগের মঙ্গল করুন, তাহ ইলে তাহাদিগেরও কিছু মঙ্গল হইতে পারে। * বাঙ্গালিরা স্ত্রীলোকদিগকে পরদানিশীন করিয়া রাখে শুনা আছে। ইহা সত্য বটে, তবে সৰ্ব্বত্র নয়। যখন কোন লাভের কথা না থাকে, তখন স্ত্রীলোকদিগকে অস্তঃপুরে রাখে, লাভের সূচনা দেখিলেই বাহির করিয়া আনে। আমরা যেরূপ ফৌলিংপিস লইয়া ব্যবহার করি, বাঙ্গালিরা পৌরাঙ্গন লইয়াও সেইরূপ কয়ে ; যখন প্রয়োজন নাই, তখন বাক্সবন্দি করিয়া রাখে, শিকার দেখিলেই বাহির করিয়া তাহাতে বারুদ পোরে। বন্দুকের সিসের গুলিতে ছার পক্ষিজাতির পক্ষচ্ছেদ হয়, বাঙ্গালির মেয়ের নয়নবাণে কাহার পক্ষচ্ছেদের আশা করে বলিতে পারি না। আমি বাঙ্গালির কস্তার অঙ্গভরণের যেরূপ গুণ দেখিয়াছি, তাহাতে আমার ইচ্ছা করে, আমারও ফৌলিংপিসটিকে তুই একখানা সোণার গহনা পরাইব—দেখি, পাখী ঘুরিয়া আসিয়া বন্দুকের উপর পড়ে কি না। তবু নয়নবাণে কেন, শুনিয়াছি বাঙ্গালির মেয়ে নাকি পুষ্পবাণ প্রয়োগেও বড় সুপটু। হিন্দু সাহিত্যোক্ত পুষ্পশরে, আর এই বঙ্গকামিনীগণের পরিত্যক্ত পুষ্পশরে কোন সম্বন্ধ আছে কি না, তাহা আমি জানি না ; যদি থাকে, তবে বাঙ্গালির মেয়েকে তুরাকাঙ্ক্ষিণী বলিতে হইবে। শুনিয়াছি,কোন বাঙ্গালি কবি নাকি লিখিয়াছিলেন, “কি ছার মিছার ধনু ধরে ফুলবাণ”; এখন কথাটা একটু ফিরাইয়া বলিতে হইবে, “কি ছার মিছার ফুল, মারে ফুলবাণ।” যাহা হউক, ফুলবাণ সচরাচর প্রচলিত না হইয় উঠে। বাঙ্গালায় ইংরেজ টেকা ভার হইবে—আমার সর্বদা ভয় করে, আমি এই গরিব দোকানদারের ছেলে, ছ টাকার লোভে সমুদ্র পার হইয়া আসিয়াছি—কে জানে, কখন বঙ্গকুলকামিনীপ্রেরিত কুসুমশর আসিয়া, এই ছেড়া তাম্বু ফুটা করিয়া, আমার হৃদয়ে আঘাত করিবে, আমি অমনি ধপাস করিয়া চিতপাত হইয়া পড়িয়া যাইব । হায় । তখন আমার কি হইবে । কে মুখে জল দিবে। আমি এমত বলি না যে, সকল বাঙ্গালির মেয়ে এরূপ ফৌলিংপিস, অথবা সকলেই এরূপ পুষ্পক্ষেপণী প্রেরণে সুচতুরা। তবে কেহ কেহ বটে, ইহা আমি জনরবে অবগত হইয়াছি। শুনিয়াছি, তাহারা নাকি ভর্তুনিয়োগানুসারেই এরূপ কাৰ্য্যে প্রবৃত্ত । এই ভর্তৃগণ দেশীয় শাস্ত্রানুসারে এই পদ্ধতি অবলম্বন করিয়াছেন। হিন্দুদিগের যে চারিটি

  • বাঙ্গালি স্ত্রীলোকের কেহ কেহ অন্তঃপুর পরিত্যাগ করিয়া রাজপুত্রকে অভ্যর্থনা করিয়াছিল।