পাতা:শকুন্তলা - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (১৮৭৫).pdf/৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৮
শকুন্তলা।

 অনসূয়া কুটীরে পঁহুছিবার পূর্ব্বেই, প্রিয়ংবদা তাঁহার নিকটে উপস্থিত হইয়া কহিলেন, সখি! জানই ত দুর্ব্বাসা স্বভাবতঃ অতিকুটিলহৃদয়, তিনি কি কাহারও অনুনয় শুনেন; তথাপি অনেক বিনয়ে কিঞ্চিৎ শান্ত করিয়াছি। যখন দেখিলাম নিতান্ত ফিরিবেন, তখন চরণে ধরিয়া কহিলাম, ভগবন্! সে তোমার কন্যা, তোমার প্রভাব ও মহিমা কি জানে? কৃপা করিয়া তাহার এই অপরাধ ক্ষমা করিতে হইবেক। তখন তিনি কহিলেন, আমি যাহা কহিয়াছি, তাহা অন্যথা হইবার নহে; তবে যদি কোনও অভিজ্ঞান দর্শাইতে পারে, তাহার শাপমোচন হইবেক; এই বলিয়া চলিয়া গেলেন। অনসূয়া কহিলেন, ভাল, এখন আশ্বাসের পথ হইয়াছে। রাজর্ষি প্রস্থানকালে শকুন্তলার অঙ্গুলিতে এক স্বনামাঙ্কিত অঙ্গুরীয় পরাইয়া দিয়া গিয়াছেন। অতএব, শকুন্তলার হস্তেই শকুন্তলার শাপমোচনের উপায় রহিয়াছে। রাজা যদিই বিস্মৃত হন, তাঁহার সেই স্বনামাঙ্কিত অঙ্গুরীয় দেখাইলেই স্মরণ হইবে। উভয়ে এইরূপ কথোপকথন করিতে করিতে,কুটীরাভিমুখে চলিলেন।

 কিয়ৎ ক্ষণে, উভয়ে কুটীরদ্বারে উপস্থিত হইয়া দেখিলেন, শকুন্তলা, করতলে কপোল বিন্যাস করিয়া, স্পন্দহীনা, মুদ্রিতনয়না, চিত্রার্পিতার ন্যায়, উপবিষ্টা আছেন। তখন প্রিয়ংবদা কহিলেন, অনসূয়ে! দেখ দেখ, শকুন্তলা পতিচিন্তায় মগ্ন হইয়া এক বারে বাহ্যজ্ঞানশূন্য হইয়া রহিয়াছে; ও কি অতিথি অভ্যাগতের