পাতা:শকুন্তলা - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (১৮৭৫).pdf/৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬০
শকুন্তলা।

তোমায় ভর্ত্তৃসন্নিধানে পাঠাইয়া দিব। অনন্তর, তদীয় আদেশ ক্রমে শকুন্তলার প্রস্থানের উদেযাগ হইতে লাগিল।

 প্রস্থানসময় উপস্থিত হইল। গৌতমী, এবং শার্ঙ্গরব ও শারদ্বত নামে দুই শিষ্য, শকুন্তলাসমভিব্যাহারে গমনের নিমিত্ত প্রস্তুত হইলেন। অনসূয়া ও প্রিয়ংবদা যথাসম্ভব বেশ ভূষা সমাধান করিয়া দিলেন। মহর্ষি শোকাকুল হইয়া মনে মনে কহিতে লাগিলেন, অদ্য শকুন্তলা যাইবে বলিয়া, আমার মন উৎকণ্ঠিত হইতেছে, নয়ন অনবরত বাষ্পবারিতে পরিপূর্ণ হইতেছে, কণ্ঠরোধ হইয়া বাক‍্শক্তিরহিত হইতেছি, জড়তায় নিতান্ত অভিভূত হইতেছি। কি আশ্চার্য্য! আমি বনবাসী, স্নেহবশতঃআমারও ঈদৃশ বৈপ্লব্য উপস্থিত হইতেছে, না জানি সংসারীরা এমন অবস্থায় কি দুঃসহ ক্লেশ ভোগ করিয়া থাকে। বুঝিলাম, স্নেহ অতি বিষম বস্তু। পরে শোকাবেগ সংবরণ করিয়া, শকুন্তলাকে কহিলেন বৎসে! বেলা হইতেছে, প্রস্থান কর; আর অনর্থ কালহরণ করিতেছ কেন? এই বলিয়া তপোবনতরুদিগকে সম্বোধন করিয়া কহিলেন হে সন্নিহিত তরুগণ! যিনি তোমাদের জলসেচন না করিয়া কদাচ জলপান করিতেন না, যিনি ভূষণপ্রিয়া হইয়াও স্নেহবশতঃ কদাচ তোমাদের পল্লবভঙ্গ করিতেন না, তোমাদের কুসুমপ্রসবের সময় উপস্থিত হইলে, যাঁহার আনন্দের সীমা থাকিত না, অদ্য সেই শকুন্তলা পতিগৃহে যাইতেছেন, তোমরা সকলে অনুমোদন কর।