পাতা:শকুন্তলা - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (১৮৭৫).pdf/৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পঞ্চম পরিচ্ছেদ।
৭৭

শিক্ষায় প্রবঞ্চনানৈপুণ্য দেখিতে পাওয়া যায়। দেখ, কেহ শিখাইয়া দেয় না, অথচ কোকিলারা, কেমন প্রবঞ্চনা করিয়া, স্বীয় সন্তানদিগকে অন্য পক্ষী দ্বারা প্রতিপালিত করিয়া লয়। শকুন্তলা কষ্ট হইয়া কহিলেন; অনার্য্য! তুমি আপনি যেমন, অন্যকেও সেইরূপ মনে কর। রাজা কহিলেন, তাপসকন্যাে! দুষ্মন্ত গোপনে কোনও কর্ম্ম করে না; যখন যাহা করিয়াছে, সমুদায়ই সর্ব্বত্র প্রসিদ্ধ আছে। কই কেহ বলুক দেখি, আমি তোমার পাণিগ্রহণ করিয়াছি। শকুন্তলা কহিলেন, তুমি আমাকে স্বৈচ্ছাচারিণী করিলে। পুরুবংশীয়ের অতি উদারস্বভাব এই বিশ্বাস করিয়া, যখন আমি মধুমুখ পাষাণহৃদয়ের হস্তে আত্মসমর্পণ করিয়াছি, তখন আমার ভাগ্যে যে এই ঘটিবেক ইহা বিচিত্র নহে। এই বলিয়া অঞ্চল মুখে দিয়া শকুন্তলা রোদন করিতে লাগিলেন।

 তখন শার্ঙ্গরব কহিলেন, অগ্র পশ্চাৎ না ভাবিয়া কর্ম্ম করিলে, পরিশেষে এইরূপ মনস্তাপ পাইতে হয়। এই নিমিত্ত সকল কর্ম্মই, বিশেষতঃ যাহা নির্জনে করা যায়, সবিশেষ পরীক্ষা না করিয়া করা কর্ত্তব্য নহে? পরস্পরের মন না জানিয়া বন্ধুতা করিলে, সেই বন্ধুতা অবশেষে শত্রুতাতে পর্য্যবসিত হয়। শার্ঙ্গরবের তিরস্কারবাক্য শ্রবণ করিয়া রাজা কহিলেন, কেন আপনি, স্ত্রীলোকের কথায় বিশ্বাস করিয়া, আমার উপর