পাতা:শকুন্তলা - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (১৮৭৫).pdf/৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৪
শকুন্তলা।

ক্ষণ পরে, প্রত্যাগত হইয়া চৌকীদারকে কহিল, আরে! ত্বরায়। ধীবরের বন্ধন খুলিয়া দে, এ চোর নয়। অঙ্গুরীয়প্রাপ্তিবিষয় যাহা কহিয়াছে, বোধ হইতেছে তাহার কিছুই মিথ্যা নহে। আর রাজা উহাকে অঙ্গুরীয়মূল্যের অনুরূপ এই মহামূল্য পুরস্কার দিয়াছেন। এই বলিয়া পুরস্কার দিয়া, নগরপাল ধীবরকে বিদায় দিল এবং চৌকীদারকে সঙ্গে লইয়া স্বস্থানে। প্রস্থান করিল।

 এ দিকে অঙ্গুরীয় হস্তে পতিত হইবামাত্র, শকুন্তলাবৃত্তান্ত আদ্যোপান্ত রাজার স্মৃতিপথে আরূঢ় হইল। তখন তিনি, অত্যন্ত কাতর হইয়া, যৎপরোনাস্তি বিলাপ ও পরিতাপ করিতে লাগিলেন, এবং শকুন্তলার পুনর্দর্শনবিষয়ে একান্ত। হতাশ্বাস হইয়া সর্ব্ব বিষয়ে নিতান্তু নিরুৎসাহ হইলেন। আহার, বিহার, রাজকার্য্যপর্য্যালোচনা এক বারেই পরিত্যক্ত হইল। শকুন্তলার চিন্তায় একান্ত মগ্ন হইয়া, তিনি সর্ব্বদাই ম্লান বদনে কালযাপন করেন, কাহারও সহিত বাক্যালাপ করেন না, কাহাকেও নিকটে আসিতে দেন না; কেবল প্রিয়বয়স্য মাধব্য সর্ব্বদা সমীপে উপবিষ্ট থাকেন। মাধব্য সান্ত্বনাবাক্যে প্রবোধ দিতে আরম্ভ করিলে, তাঁহার শোক সাগর উথলিয়া উঠিত, নয়নযুগল হইতে অবিরত বাষ্পবারি বিগলিত হইতে থাকিত।