পাতা:শকুন্তলা - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (১৮৭৫).pdf/৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৮
শকুন্তলা।

কালে, প্রিয়া অশ্রুপূর্ণ নয়নে আমার হস্তে ধরিয়া কহিলেন, আর্যপুত্র! কত দিনে আমায় নিকটে লইয়া যাইবে? তখন আমি এই অঙ্গুরীয় তাঁহার কোমল অঙ্গুলীতে পরাইয়া দিয়া কহিলাম, প্রিয়ে! তুমি প্রতিদিন আমার নামের এক একটি অক্ষর গণিবে; গণনাও সমাপ্ত হইবে, আমার লোক আসিয়া তোমায় লইয়া যাইবে। প্রিয়ার নিকট সরল হৃদয়ে এই প্রতিজ্ঞা করিয়া আসিয়াছিলাম। কিন্তু মোহান্ধ হইয়া এক বারেই বিস্মৃত হই।

 তখন মাধব্য কহিলেন, বয়স্য! এ অঙ্গুরীয় কেমন করিয়া রোহিত মৎস্যের উদরে প্রবিষ্ট হইল? রাজা করিলেন, শুনিয়াছি, শচীতীর্থে স্নান করিবার সময়, প্রিয়ার অঞ্চল প্রান্ত হইতে সলিলে ভ্রষ্ট হইয়াছিল। মাধব্য কহিলেন, হাঁ সম্ভব বটে, সলিলে মগ্ন হইলে রোহিত মৎস্যে গ্রাস করে। রাজা অঙ্গুরীরে দৃষ্টিনিক্ষেপ করিয়া কহিলেন, আমি এই অঙ্গুরীয়ের যথোচিত তিরস্কার করিব। এই বলিয়া কহিলেন, অরে অঙ্গুরীয়! প্রিয়ার কোমল করপল্লব পরিত্যাগ করিয়া, জলে মগ্ন হইয়া, তোর কি লাভ হইল বল্? অথবা, তোরে তিরস্কার করা অন্যায়; কারণ, অচেতন ব্যক্তি কথনও গুণগ্রহণ করিতে পারে না; নতুবা, আমিই কি নিমিত্ত প্রিয়ারে পরিত্যাগ করিলাম? এই বলিয়া, অশ্রুপূর্ণ নয়নে শকুন্তলাকে উদ্দেশ করিয়া কহিলেন প্রিয়ে! আমি তোমায় অকারণে পরিত্যাগ করিয়াছি, অনূ-