পাতা:শকুন্তলা - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (১৮৭৫).pdf/৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৪
শকুন্তলা।

যে মহোপকার করেন, দেবরাজকৃত সৎকারকে আমি তদপেক্ষা অধিক বোধ করি না। বিবেচনা করিতে গেলে, আজি কালি মহারাজের ভুজবলেই দেবলোেক নিরুপদ্রব রহিয়াছে। রাজা কহিলেন, আমি যে অনায়াসে দেবরাজের আদেশ সম্পন্ন করিতে পারি, সে দেবরাজেরই মহিমা; নিযুক্তেরা প্রভুর প্রভাবেই মহৎ মহৎ কর্ম্ম সকল সমাধান করিয়া উঠে; যদি সূর্য্যদেব আপন রথের অগ্রভাগে না রাখিতেন, তাহা হইলে অরুণ কি অন্ধকার দূর করিতে পারিতেন? তখন মাতলি অত্যন্ত প্রীত হইয়া কহিলেন, মহারাজ! বিনয় সদ্‌গুণের শোভা সম্পাদন করে, এ কথা আপনাতেই বিলক্ষণ বর্ত্তিয়াছে।

 এইরূপ কথোপকথনে আসক্ত হইয়া, কিয়ৎ দূর আগমন করিয়া, রাজা মাতলিকে জিজ্ঞাসা করিলেন, দেবরাজসারথে! ঐ যে পূর্ব্বপশ্চিমে বিস্তৃত পর্ব্বত স্বর্ণনির্মিতের ন্যায় প্রতীয়মান হইতেছে, ও পর্ব্বতের নাম কি? মাতলি কহিলেন, মহারাজ! ও হেমকূট পর্ব্বত, কিন্নর ও অপ্সরাদিগের বাসভূমি; তপস্বীদিগের তপস্যাসিদ্ধির সর্ব্বপ্রধান স্থান; ভগবান্ কশ্যপ এ পর্ব্বতে তপস্যা করেন। তখন রাজা কহিলেন, তবে আমি ভগবানকে প্রণাম ও প্রদক্ষিণ করিয়া যাইব; এতাদৃশ মহাত্মার নাম শ্রবণ করিয়া, বিনা প্রণাম প্রদক্ষিণ, চলিয়া যাওয়া অবিধেয়। তুমি রথ স্থির কর, আমি এই স্থানেই অবতীর্ণ হইতেছি।