পাতা:শকুন্তলা - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (১৮৭৫).pdf/৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৬
শকুন্তলা।

শ্রবণ করিয়া মনে মনে এই বিতর্ক করিতে লাগিলেন, এ অবিনয়ের স্থান নহে; এখানে যাবতীয় জীব জন্তু স্থানমাহাত্ম্যে হিংসা, দ্বেষ, মদ, মাৎসর্য্য প্রভৃতি পরিত্যাগ করিয়া, পরস্পর সৌহার্দ্দে কালযাপন করে, কেহ কাহারও প্রতি অত্যাচার বা অনুচিত ব্যাবহার করে না; এমন স্থানে কে ঔদ্ধত্যপ্রকাশ করিতেছে? যাহা হউক, এ বিষয়ের অনুসন্ধান করিতে হইল।

 এইরূপ কৌতূহলাক্রান্ত হইয়া, রাজা শব্দানুসারে কিঞ্চিৎ অগ্রসর হইয়া দেখিলেন, এক অতি অল্পবয়স্ক শিশু, সিংহশিশুর কেশর আকর্ষণ করিয়া, অত্যন্ত উৎপীড়ন করিতেছে, দুই তাপসী সমীপে দণ্ডায়মান আছেন। দেখিয়া চমৎকৃত হইয়া রাজা মনে মনে কহিতে লাগিলেন, তপোবনের কি অনির্বচনীয় মহিমা! মানবশিশু সিংহশিশুর উপর অত্যাচার করিতেছে, সিংহশিশু অবিকৃত চিত্তে সেই অত্যাচার সহ্য করিতেছে। অনন্তর, কিঞ্চিৎ নিকটবর্ত্তী হইয়া, সেই শিশুকে নিরীক্ষণ করিয়া, স্নেহরসপরিপূর্ণ চিত্তে কহিতে লাগিলেন, আপন ঔরস পুত্রকে দেখিলে মন যেরূপ স্নেহরসে আর্দ্র হয়, এই শিশুকে দেখিয়া আমার মন সেইরূপ হইতেছে কেন? অথবা, আমি পুত্রহীন বলিয়া, এই সর্ব্বাঙ্গসুন্দর শিশুকে দেখিয়া আমার মনে এরূপ স্নেহরসের আবির্ভাব হইতেছে।