পাতা:শকুন্তলা - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (১৮৭৫).pdf/৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৮
শকুন্তলা।

পরাতে, বালক কুপিত হইয়া কহিল, তোমরা খেলনা দিলে না, তবে আমি উহারে ছাড়িব না। তখন এক তাপসী অপর তাপসীকে কহিলেন, সখি! ও কথায় ভুলবার ছেলে নয়; কুটীরে মাটির ময়ূর আছে, ত্বরায়, লইয়া আইস। তাপসী মৃন্ময় ময়ূরের আনয়নার্থ কুটীরে গমন করিলেন।

 প্রথমে সেই শিশুকে দেখিয়া, রাজাৱ অস্তুঃকরণে যে স্নেহের সঞ্চার হইয়াছিল, ক্রমে ক্রমে সেই স্নেহ গাঢ়তর হইতে লাগিল। তখন তিনি মনে মনে কহিতে লাগিলেন, কেন, এই অপর চিত শিশুকে ক্রোডে করিবার নিমিত্ত, আমার মন এমন উৎসুক হইতেছে! পরের পুত্র দেখিলে মনে এত স্নেহোদয় হয়, আমি পূর্ব্বে জানিতাম না। আহা! যাহার এই পুত্র, সে ইহাকে ক্রোড়ে লইয়া যখন ইহার মুখচুম্বন, করে, হাস্য করিলে যখন ইহার মুখমধ্যে অর্দ্ধবিনির্গত কুন্দসন্নিত দন্তগুলি অবলোকন করে, যখন ইহার মৃদু মধুর আধ আধ কথাগুলি শ্রবণ করে, তখন সেই পুণ্যবান্ ব্যক্তি কি অনির্বচনীয় প্রীতি প্রাপ্ত হয়। আমি অতি হতভাগ্য! সংসারে আসিয়া এই পরম সুখে বঞ্চিত রহিলাম। পুত্রকে ক্রোড়ে লইয়া, তাহার মুখচুম্বন করিয়া, সর্ব্ব শরীর শীতল করিব; পুত্রের অর্দ্ধবিনির্গত দস্তগুলি অবলোকন করিয়া, নয়নযুগলের সার্থকতা সম্পাদন করিব; এবং অর্দ্ধোচ্চারিত মৃদু মধুর বচনপরম্পরা শ্রবণে শ্রবণেন্দ্রিয়ের চরিতার্থতা