পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (অষ্টম সম্ভার).djvu/১২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শুভদ তিনি ভাল আছেন ; আলাদা জাহাজে ছিলেন কি না তাই বৃক্ষ পেয়েচেন । দু'জনে কি তবে আলাদা জাহাজে ছিল ? তা ছিল বই কি, না হলে কুলুবে কেন ? লোকজন ত সঙ্গে কম যায়নি। তাদের কি হ’ল ? আহা ! সবাই ডুবেচে । সে বেলাটা এমনই কাটিল ; ‘সন্ধ্যা হয়, ঘরকন্নার কাজ পড়ে আছে’, ‘কি আর করবে বল ? তবে এখন আসি ; বলিয়া সকলেই একে একে প্রস্থান করিল। জয়ার মাও একট যা-তা করিয়া সিদ্ধ পাক করিয়া লইয়া সকাল সকাল দ্বার বন্ধ করিল, আর যতক্ষণ নিদ্রা না আসিল ততক্ষণ মধ্যে মধ্যে চীৎকার করিয়া প্রতিবাসিনীগণের অন্তঃকরণে সেই গ্রামজোড়া জাহাজ আর লাটসাহেব কান্নার কথা জানাইয়া দিতে লাগিল । পরদিন প্রাতঃকাল হইবামাত্রই জয়ার মা নারায়ণপুর অভিমুখে রওনা হইয়া পড়িল। ক্রমে সে নারায়ণপুরে প্রবেশ করিল ,সেই পথ, সেই ঘাট, সেই বৃক্ষের শ্রেণী, সেইসব—সমস্ত পরিচিত। জয়ার মার মনে পড়িল যে, এই পথ দিয়াই সে চলিত, আবার এই পথ দিয়াই বক্ষে আঘাত কবিতে করিতে ফিরিয়া আদিত। আর সে নাই, তেমন ঝগড়া আর কখনো হইবে না, তেমন করিয়া বুক পিটিতেও আর পাইবে না। শত বেদনায় তাহার হৃদয় আকুল হইয়া উঠিল, সহস্ৰগুণ চীংকারে তাহা প্রশমিত করিতে করিতে জয়ার মা চলিল যাহারা বাটীর সন্মুখ দিয়া যাইতে লাগিল, তাঁহাকে শতকৰ্ম্ম ফেলিয়া ও অন্ততঃ একবার জানলার নিকট অসিতে হইল । ক্রমে স্বরেন্দ্রবাবুর অট্টালিকা ঐ সম্মুখে । জয়ার কত স্থতি তাহাতে মাখান আছে ; জয়ার মা আকুলভাবে ক্ৰন্দনের তোড় আরো সহস্ৰগুণ বৃদ্ধি করিয়াছিল । সম্মুখের গেট দিয়া পূৰ্ব্বে সে ঢুকিতে পাইত না ; কারণ বাবুর নিষেধ ছিল, কিন্তু এমন ব্যাখ্রিনীর ন্যায় সে ছুটিতে ছুটতে প্রবেশ করিয়া পড়িল যে, দারওয়ানদিগের তাহাকে বাধা দিতে কিছুতেই সাহস হইল না। সকলেই প্রায় দশহস্ত পিছাইয়া দাড়াইল । স্বরেন্দ্রবাবু তখন আহারান্তে বিশ্রাম করিবার প্রয়াস করিতেছিলেন, চীংকার শব্দে বুঝিলেন জয়ার মা ঝড়ের মত আসিয়া পড়িল । আসিয়াই সে জয়াবতীকে ফিরাইয়া পাইবার জন্য অন্ধভাবে এক আবেদন করিয়াই নিকটে উপবেশন করিল, তাহার পর আর এক আবেদন, কথা শেষ না হইতেই পুনঃ পুনঃ শত সহস্ৰ আবেদন, ভিক্ষণ প্রার্থনা, কৈফিয়ং তলব ইত্যাদি নানাপ্রকারে স্বরেন্দ্রনাথকে একেবারে বিহ্বল করিয়া ফেলিল ; তৎপশ্চাদ্বন্ত মস্তক ঠোকন, দারুণ বক্ষাঘাত ও সমুষ্টি কেশাকর্ষণ প্রভৃতি আর যাহা ঘটিল তাহ সম্যক বিস্তারিত বলিবার ক্ষমতা আমাদের নাই। ు : 3