পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (অষ্টম সম্ভার).djvu/১৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ আনন্দে পরিপূর্ণ হইয়া উঠিয়াছিল। কুঙ্কম গলায় অ fচল দিয়া প্রণাম করিয়া তাহার পদধূলি মাথায় তুলিয়া নিঃশব্দে উঠিয়া দাড়াইল। শ্বশ্ৰু-বন্ধুতে এ সম্বন্ধে আর কোন কথা হইল না, গাড়িতে উঠিয়া বসিয়া তিনি বধূকে উদ্দেশ করিয়া বলিলেন, কুঞ্জনাথের সঙ্গে দেখা হ’ল না মা, পাগলা কোথায় সারাদিন পালিয়ে রইল, কাল তাকে একবার আমার কাছে পাঠিয়ে দিও। কুৰুম ঘাড় নাড়িয়া সম্মতি জানাইল । বৃন্দাবনের পিতামহ বাটীতে গৌর-নিতাই বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করিয়াছিলেন । এই ঘরে বসিয়া বৃন্দাধনের মা প্রত্যহ অনেক রাত্রি পর্য্যন্ত মালা জপ করিতেন। আজিও করিতেছিলেন । তাহার শিশু পৌত্র কোলের উপর মাথা রাখিয়া ঘুমাইয়া পড়িয়াছিল। ইহারা যেখানে বলিয়াছিলেন সেই স্থানটায় প্রদীপের ছায়া পড়িয়াছিল। সেই হেতু বৃন্দাবন ঘরে ঢুকিয়াই ইহাদিগকে দেখিতে পাইল না। সে বেদীর সন্নিকটে সরিয়া আসিয়া জামু পাতিয়া বসিল এবং কিছুক্ষণ মনে মনে প্রার্থনা করিয়া ভূমিষ্ঠ প্ৰণাম করিয়া উঠিয়া দাড়াইতেই একবার মায়ের উপর তাহার দৃষ্টি পড়িল। মনে মনে অতিশয় লজ্জিত হইয়া হাসিয়া বলিল, আমন আবছায়ায় বসে কেন মা ? ম। সস্নেহে বলিলেন, তা হোক । আয়, তুই আমার কাছে এসে একটু বোস । বৃন্দাবন কাছে আসিয়া বসিল । তাহার লজ্জা পাইবার কারণ ছিল । তখন রান্ত্রি এক প্রহরের অধিক হইয়া ছিল । এমন অসময়ে কোনদিন সে ঠাকুর-প্রণাম করিতে আসে না। আজ আসিয়াছিল ; যে আশাতীত সৌভাগোর আনন্দে বুক ভরিয়া উঠিয়াছিল, দিনটা সার্থক বোধ হইয়াছিল, তাহাই নম্রহৃদয়ে, গোপনে, ঠাকুরের কাছে নিবেদন করিয়া দিতে । কিন্তু, পাছে মা তাহার মনের কথাটা অনুমান করিয়া থাকেন, এই লজ্জাতেই সে সঙ্কুচিত হইয়াছিল । খানিক পরে মা নিদ্রিত পৌত্রের মাথায় মুখে হাত বুলাইয়া দিতে দিতে উচ্ছ্বসিত স্নেহদ্র কণ্ঠে বলিয়া উঠিলেন, ম-মরা আমার একফোটা বংশধরকে ফেলে রেখে কোথাও আমি এক পা নড়তে পারিনে, তাই, আজ মনে হচ্ছে বৃন্দাবন, আমার মাথা থেকে কে যেন ভারী বোঝা নামিয়েচে । তাকে শীগগীর ঘরে আন বাছা, আমি মায়ের হাতে সমস্ত বুঝিয়ে দিয়ে একটু ছুটি নিই—দিন কতক কাশী-বৃন্দাবন করে বেড়াই । আজ বৃন্দাবনের অন্তরেও আশা ও বিশ্বাসের এমনি স্রোতই বহিতেছিল, তথাপি সে সলজ-হাস্তে কহিল, সে আসবে কেন মা ? নিঃসন্ধিঃ-কণ্ঠে বলিলেন, আসবে বৈ কি ! সে এলে তবে ত আমার ছুটি Yetty