পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (অষ্টম সম্ভার).djvu/১৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পণ্ডিত মশাই আনন্দ ছিল না। তার পরে সহজ ভাবে বলিল, আমি এমন হয়ে মাহুষ হয়েচি কুহুম, যে, মায়ের অমতে এ বাড়িতে কেন, এ-গ্রামেও পা দিতে পারতুম না। যাক, ষে-কথা শেষ হয়ে গেছে, সে-কথা তুলে কোন পক্ষেরই আর লাভ নেই—তোমারও না, আমারও না, বাও আর দেরি করে না, ওকে খাইয়ে দাও গে। বলিয়া বৃন্দাবন ফিরিয়া গিয়া আসনে বসিল । কুহুম চোখের জল চাপিয়া মৌন-অধোমুখে ছেলে লইয়া ঘরে চলিয়া গেল। ঘণ্ট-খানেক পরে পিতা-পুত্রে গাড়ি চড়িয়া যখন গৃহে ফিরিয়া চলিল, তখন পথে চরণ জিজ্ঞাসা করিল, বাবা, মা অত কাদছিল কেন ? বৃন্দাবন আশ্চৰ্য্য হইয়া বলিল, তোর মা হয় কে বলে দিলে রে ? চরণ জোর দিয়া কহিল, আমার মা-ই ত হয়—হয় না ? বৃন্দাবন ও কথার জবাব না দিয়া জিজ্ঞাসা করিল, তুই থাকতে পারিস তোর মার কাছে ? চরণ খুশী হইয়া মাথা নাড়িয়া বলিল, পারি বাবা । আচ্ছা, বলিয়া বৃন্দাবন মুখ ফিরাইয়া গাড়ির একধারে গুইয়া পড়িল, এবং রৌদ্রতপ্ত স্বচ্ছ আকাশের পানে চাহিয়া রহিল। - পরদিন অপরাহ্ল-বেলায় কুঙ্কম নদীতে জল আনিবার জন্ত সদর দরজায় শিকল তুলিয়া দিতেছিল, একটি বার-তের বছরের বালক এদিকে-ওদিকে চাহিয়া কাছে আসিয়া বলিল, তুমি কুঞ্জ বৈরাগীর বাড়ি দেখিয়ে দিতে পার ? পারি, তুমি কোথা থেকে আসচ ? - বাড়ল থেকে। পণ্ডিত মশাই চিঠি দিয়েচেন, বলিয়া সে মলীন উত্তরায়ের মধ্যে হাত দিয়া একখানি চিঠি বাহির করিয়া দেখাইল । কুস্কমের শিরার রক্ত উত্তপ্ত হইয়া উঠিল। চাহিয়া দেখিল, উপরে তাহারই নাম। খুলিয়া দেখিল, অনেক লেখা—বৃন্দাবনের স্বাক্ষর । কি কথা লেখা আছে তাহাই জানিবার উন্মত্ত-আগ্রহ সে প্রাণপণে দমন করিয়া ছেলেটিকে ভিতরে ডাকিয়া আনিয়া প্রশ্ন করিল, তুমি পণ্ডিত মশাই কাকে বলছিলে ? কে তোমার হাতে চিঠি দিলে ? ছেলেটি আশ্চৰ্য্য হইয়া বলিল, পণ্ডিত মশাই দিলেন । কুহুম পাঠশালার কথা জানিত না, বুঝিতে না পারিয়া আবার প্রশ্ন করিল, তুমি চরণের বাপকে চেন ? চিনি—তিনিই ত পণ্ডিত মশাই । র্তার কাছে তুমি পড় ? আমি পড়ি, পাঠশালে আরো অনেক পোড়ো আছে। $2 छत्र-२२