পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (অষ্টম সম্ভার).djvu/১৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ কুঙ্কম উৎস্থক হইয়া উঠিল এবং তাহাকে প্রশ্ন করিয়া এ সম্বন্ধে সমস্ত জানিয়া লইল । পাঠশালা বাটীতে প্রতিষ্ঠিত, বেতন লাগে না, পণ্ডিত মশাই নিজেই প্লেট পেনসিল প্রভৃতি কিনিয়া দেন, যে-সকল দরিদ্র ছাত্র দিনের বেলায় অবকাশ পায় না, তাহারা সন্ধ্যার সময় পড়িতে আসে, এবং ঠাকুরের আরতি শেষ হইয়া গেলে প্রসাদ খাইয়া কলরব করিয়া ঘরে ফিরিয়া যায়। দুইজন বয়স্ক ছাত্র পাঠশালে ইংরাজী পড়ে, ইত্যাদি যাবতীয় তথ্য জানিয়া লইয়া কুহুম ছেলেটিকে মুড়ি, বাতাসা প্রভৃতি দিয়া বিদায় দিয়া চিঠি খুলিয়া বসিল । মুখের স্বপ্ন কে যেন প্রবল ঝাকানি দিয়া ভাঙিয়া দিল । পত্র তাহাকেই লেখা বটে, কিন্তু একটা সম্ভাষণ নাই, একটা স্নেহের কথা নাই, একটু আশীৰ্ব্বাদ পৰ্য্যন্ত নাই। অথচ, এই তার প্রথম পত্র । ইতিপূৰ্ব্বে আর কেহ তাকে পত্র লেখে নাই সত্য, কিন্তু সে তার সঙ্গিনীদের অনেকেরই প্রেমপত্র দেখিয়াছে—তাহাতে ইহাতে কি কঠোর প্রভেদ ! আগাগোড়া কাজের কথা। কুন্ত্রনাথের বিবাহের কথা। এ-কথা বলিতেই সে কাল আসিয়াছিল। বৃন্দাবন জানাইয়াছে, মা সম্বন্ধ স্থির করিয়াছেন, এবং সমস্ত ব্যয়ভার তিনিই বহিবেন । সব দিক দিয়াই এ বিবাহ প্রার্থনীয়, কেন না, ইহাতে কুরনাথের এবং সেই সঙ্গে তাহারও সাংসারিক দুঃখ-কষ্ট ঘুচিবে। এই ইঙ্গিতটা স্পষ্ট করিয়াই দেওয়া হইয়াছে। * একবার শেষ করিয়া সে আর একবার পড়িবার চেষ্টা করিল, কিন্তু এবার অক্ষরগুলো তাহার চোখের স্বমুখে নাচিয়া বেড়াইতে লাগিল। সে চিঠিখানা বন্ধ করিয়া ফেলিয়া কোনমতে ঘরে আসিয়া শুইয়া পড়িল । তাহাদের এতবড় সৌভাগ্যের সস্তাবনাও তাহার মনের মধ্যে একবিন্দু পরিমাণও আনন্দের আভাস জানাইতে পারিল না । Wy মাস-থানেক হইল, কুক্ষনাথের বিবাহ হইয়া গিয়াছে। বৃন্দাবন সেদিন হইতে আর আসে নাই । বিবাহের দিনও জর হইয়াছে বলিয়া অনুপস্থিত ছিল । মা চরণকে লইয়া শুধু সেই দিনটির জন্য আসিয়াছিলেন, কারণ, গৃহদেবতা ফেলিয়া রাখিয়া কোথাও তাহার থাকিবার জো ছিল না । শুধু চরণ আরও পাঁচ-ছয়দিন ছিল। মনের মত নূতন মা পাইয়াই হোঁক বা নদীতে স্নান করিবার লাভেই হোক, সে ফিরিয়া ঘাইতে চাহে নাই, পরে তাহাকে জোর করিয়া লইয়া যাওয়া হইয়াছিল। সেই অবধি কুন্থমের জীবন দুর্ভর হইয়া উঠিয়াছিল। » ግ•