পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (অষ্টম সম্ভার).djvu/১৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পণ্ডিত মশাই কুৰুষ নিরতিশয় ব্যথিত ও লজ্জিত হইয়া আস্তে আস্তে বলিল, আমার কোটি কোটি অপরাধ হয়েচে । তখন তোমাকে আমি চিনতে পারিনি। এখন পেরেছ ? কুহুম চুপ করিয়া রহিল। বৃন্দাবনও চুপ করিয়া থাকিয়া সহসা বলিয়া উঠিল, ভাল কথা, একটা কুকুর রাঙ্গাঘরে ঢুকে তোমার হাড়ি-কুঁড়ি রান্না-বান্না সমস্ত যে মেরে দিয়ে গেল। কুষম কিছুমাত্র উদ্বেগ বা চাঞ্চল্য প্রকাশ না করিয়া জবাব দিল, যাক গে। আমি ত থাবো না—আগে জানলে রাধতেই যেতুম না। আজ একাদশী বুঝি ? কুসুম ঘাড় হেঁট করিয়া বলিল, জানিনে। ও-সব আমি করিনে । কর না ? কুষম তেমনি অধোমুখে নিরুত্তর হইয়া রহিল । বৃন্দাবন সন্ধিপ্তম্বরে বলিল, আগে করতে, হঠাৎ ছাড়লে কেন ? পুনঃ পুনঃ আঘাতে কুকুম অধীর হইয়া উঠিতেছিল। উত্যক্ত হইয়া কহিল, করিনে আমার ইচ্ছে বলে। জেনে শুনে কেউ নিজের সর্বনাশ করতে চায় না, সেইজন্যে । দাদার ব্যবহার অসহ্য হয়েছে, কিন্তু সত্যি বলচি, তোমার ব্যবহারে গলায় দড়ি দিতে ইচ্ছে করচে । বৃন্দাবন কহিল, সেটা ক'রো না। আমার ব্যবহারের বিচার পরে হবে, না হলেও ক্ষতি নাই, কিন্তু দাদার ব্যবহার অসহ্য হল কেন ? কুঙ্কম ভয়ানক উত্তেজিত হইয়া জবাব দিল, সে অার এক মহাভারত—তোমাকে শোনাবার আমার ধৈর্য্য নেই । মোট কথা, তিনি নিজের বিষয়-সম্পত্ত্বি ছেড়ে আর আমাকে দেখতে শুনতে পারবেন না, তার শাশুড়ির হুকুম নেই । খেতে-পরতে দেওয়া বন্ধ করেচেন ; চরণ তার মায়ের ভার না নিলে অনেকদিন আগেই আমাকে শুকিয়ে মরতে হতো। এখন আমি—সহসা সে থামিয়া গিয়া ভাবিয়া দেখিল, আর বলা উচিত কি না ; তারপর বলিল, এখন আমি তোমার সম্পূর্ণ গলগ্রহ। তাই একদিন একদণ্ডও ওখানে আর থাকতে চাইনে । বৃন্দাবন সহাস্তে প্রশ্ন করিল, তাই থাকতে ইচ্ছে নেই ? কুস্কম একটিবার চোখ তুলিয়াই মুখ নিচু করিল। এই সহজ সহান্ত প্রশ্নের মধ্যে যতখানি খোচা ছিল, তাহার সমস্তটাই তাহাকে গভীরভাবে বিদ্ধ করিল। বৃন্দাবন বলিল, চরণ তার মায়ের তার নিশ্চয়ই নেবে, কিন্তু কোথায় থাকতে চাও তুমি । কুহুম তেমনি নতমুখেই বলিল, কি করে জানব ? তারাই জানেন। ১৮9