পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (অষ্টম সম্ভার).djvu/২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ কন্টকে সৰ্ব্বাঙ্গ ক্ষতবিক্ষত হইয়াছে, তথাপি শুভদা পথ বহিয়া চলিতে লাগিল । এক নিমিধের তরে বৃষ্টির উপশম নাই। এক মুহূর্তের জন্য মেঘের শব্দের বিরাম নাই, কোন মুখে কোথায় চলিয়াছে তাহার স্থিরতা নাই, তথাপি বনবাদাড় সরাইতে সরাইতে অগ্রসর হইতে লাগিল । অনেকক্ষণ পরে বোধ হইল যেন অপেক্ষাকৃত প্রশস্ত পথ সম্মুখে দেখা যাইতেছে । দ্বিগুণ উৎসাহে হাটিয়া আসিয়া শুভদা দেখিল যথার্থই পাকা পথ পাইয়াছে। এখন কিন্তু অন্ত কথা। যখন পথ পায় নাই তখন কেবল পথের ভাবনাই ভাবিয়াছিল, এখন কাজের কথা মনে হইতে লাগিল। এত রাত্রে কি করিয়া দেখা হইবে, দেখা হইলেই কি কাৰ্য্যসিদ্ধি হইবে ? সিদ্ধ হউক আর না হউক, এ দুর্য্যোগে বাটই বা কেমন করিয়া ফিরিয়া যাইবে ? ক্রমে গ্রামের ভিতর প্রবেশ করিল ; কিছুদূর অসিয়াই প্রকাও অট্টালিকা ও চতুৰ্দ্ধিক-সংলগ্ন রেলিং দেওয়া বাগান দেখিয়া বুঝিতে পারিল ইহাই নন্দীদের বাট ; কিন্তু কেমন করিয়া প্রবেশ করিবে? আর প্রবেশ করলেই বা তাহার সহিত এত রাত্রে কি করিয়া সাক্ষাং করিবে । শুভদার কান্না আসিল ; এখন কি হইবে ? কি কলিয়া বাড়ি যাইবে ? পরিশ্রমে, অনাহারে, দুর্ভাবনায় সে মৃতপ্রায় হইয়া পড়িয়াছিল, নন্দীদের বাটীর সম্মুখে যে শিবমন্দির ছিল তাহারই বারান্দার উপর আসিয়া একেবারে শুইয়া পড়িল। তখন বৃষ্টি সম্পূর্ণ ছাড়ে নাই, তবে কমিয়া আসিয়াছিল। বৈশাখের মেঘ যেমন একমুহূর্যে গগন আচ্ছন্ন করিয়া ফেলে, তেমনিই একমুহূৰ্ত্তে গগন ছাড়িয়া কোথায় চলিয়া যায় । এ-মেঘও দেখিতে দেখিতে আকাশের প্রান্তদেশে মিলাইয়া যাইতে লাগিল, আবার চাদের আলোকে জগৎ অনেক শুভশ্রী ধারণ করিল। শুভদ মনে করিল এইবার ফিরিয়া যাইবার সময় হইয়াছে। সিক্তবস্ত্র একটু গুটাইয়া লইবার সময় দেখিতে পাইল একজন বৃদ্ধ ভূত্য হস্তে দীপ লইয়া জমিদার-বাটার ফটক খুলিয়া মন্দিরের দিকে অগ্রসর হইতেছে। ইহার নিকট যদি কোন সন্ধান পাওয়া যায় এইরূপ একটা ক্ষীণ আশায় ভর করিয়া প্রস্থান না করিয়া একপার্থে দাড়াইয়া রহিল । বৃদ্ধ মন্দিরের দ্বারের সম্মুখে আসিয়া দেখিল একজন স্ত্রীলোক অবগুণ্ঠনে মুখ আবৃত করিয়া দাড়াইয়া আছে ; কিন্তু কোন কথা না কহিয়া ভিতরে প্রবেশ করিল। বহুক্ষণ পরে বাহিরে আসিয়া দেখিল স্ত্রীলোকটি এখনও সেইভাবে দাড়াইয়া আছে। বৃদ্ধ প্রথমে অবগুণ্ঠন দেখিয়া অনুমান করিয়াছিল, কোন ভদ্রঘরের স্ত্রী জলের ভয়ে সেখানে আশ্রয় লইয়াছিল, এইবার চলিয়া যাইবে, কিন্তু এখনো সেইভাবে দাড়াইয়া থাকিতে দেখিয়া কৌতুহলী হইয়া জিজ্ঞাসা করিল, তুমি কে গা ? স্ত্রীলোকটি কোন কথা কহিল না । কোথায় যাবে বাছ ? 38