পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (অষ্টম সম্ভার).djvu/২৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পথ-নির্দেশ স্বলোচনা চলিম্বা গেলেন। গুণী ঔষধ-পথ্যের ব্যবস্থা করিয়া দাস-দাসী সঙ্গে দিয়া তাহাকে বায়ু-পরিবর্তনের জন্ত পশ্চিমে পাঠাইয়া দিল । যাইবার সময় স্থলোচনা বলিলেন, গুণী, তুইও আমার সঙ্গে আয় বাবা, তোর দেহটাও ভাল নেই—চল দু’জনেই যাই । গুণী স্বীকার করিতে পারিল না। তাহার কলিকাতায় কাজ ছিল, সে রহিয়া গেল । পশ্চিমে গিয়া কুলোচনা সারিতে লাগিলেন। তিনি নবদ্বীপে ও কলিকাতায় চিঠি লিখিয়া সংবাদ জানাইলেন যে, শরীর ভাল থাকিলে মাঘের শেষে দেশে ফিরিবেন। গত ছব্বিশে অগ্রহায়ণ হেমের লিবাহ হইয়াছিল, আজ ছাব্বিশে অগ্রহায়ণ ফিরিয়া আসিয়াছে। হঠাৎ এই কথাটা স্মরণ করিয়া গুণী ক্ষণকালের জন্য बई श३८७ মুখ তুলিয়া শূন্ত দৃষ্টিতে জানালার বাহিরে চাহিয়াছিল, এমন সময় পিছনে দ্বারের বাহিরে দাড়াইয়া নূতন দারোয়ান ডাকিল, মহারাজ, একঠো জরুরি তার আয়া। গুণী মুখ ফিরাইয়া দেখিল, দারোধান বুদ্ধি করিয়া পিওনকে সঙ্গে আনিয়াছে। সে খাম হাতে দিয়া দস্তখত লইয়া সেলাম করিয়া চলিয়া গেল । । গুণী তার পড়িয়া আশ্চর্যা হইয়া গেল। হেম খবর দিতেছে, সে রওনা হইয়া পড়িয়াছে, হুগলীতে নামিয়া ট্রেনে করিয়া আসিবে, সুতরাং বেলা তিন-চারটার সময় যেন হাওড়া স্টেশনে গাড়ি পাঠান হয়। সে কিজান্ত আসিতেছে, সঙ্গে কে কে আছে, কিশোরীবাবু আছেন কিংবা সে একলাই আসিতেছে, কিছুই বোঝা গেল না। বাড়িতে স্ত্রীলোক কেহ ছিল না ; মানদা মুলোচনার সহিত পশ্চিমে গিয়াছিল, তাই গুণী কিছু বিব্রত হইয়া পড়িল । পুরাতন কোচম্যান গাড়ি লইয়া গেল এবং সন্ধ্যার কিছু পূৰ্ব্বে হেমকে লইয়া ফিরিয়া আসিল । সঙ্গে দাস-দাসী, চাকর এবং কিছু জিনিসপত্র ছিল । গুণী হেমকে দেখিয়া শিহরিয়া উঠিয়া বলিল, এ কি রকম পাগলের মত বেশ করে আসা হ’ল শুনি ? হেম ভূমিষ্ঠ হইয়া প্ৰণাম করিয়া বলিল, ওপরে চল বলছি। উপরে বসিবার ঘরে গিয়া স্থির হইয়া বসিয়া জিজ্ঞাসা করিল, মা ত মাঘ মাসের আগে ফিরবেন না ? গুণী বলিল, মা সেইরকমই ত লিখেছেন। - তা হলে তাকে এর মধ্যে আর জানিয়ে কাজ নেই। কিন্তু আশ্চৰ্য্য দেখ গুণীদা, আজকের দিনে বিদেয় হয়েছিলাম, আজকের দিনেই ফিরে এলাম । গুণী বুঝিতে না পারিয়া বলিল, ফিরে এলাম কি ? হেম সহজভাবে বলিল, ফিরে এলাম বৈ কি। আর সেখানে কি করে থাকব ; কেন, তুমি কি আমার খানকাপড় দেখে কিছু বুঝতে পারছ না ? পরও কাজ-কৰ্ম্ম শেষ হয়ে গেল, জাঙ্গ চলে এলাম । - * ጰፃሕ