পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (অষ্টম সম্ভার).djvu/২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শুভদা ললনা চলিয়া গেল। যথার্থ-ই মা তখন ডাকিতেছিলেন। কাছে আসিয়া বলিল, কেন মা ? তোমার বাবা এসেচেন, ঐ ঘরে— কথা শেষ হইবার পূর্বেই ললনা চলিয়া গিয়াছে। আহার করিতে বসিলে রাসমণি জিজ্ঞাসা করিলেন, এতদিন কোথায় ছিলে ? মুখে গ্রাস তুলিয়া হারাণচন্দ্র গম্ভীরভাবে বলিলেন, সে অনেক কথা । রাসমণি মুখবাদান করিলেন, অনেক কথা কি রে ? সে-গ্রাস গলাধঃকরণ করিয়া হারাণবাবু পূৰ্ব্বমত গম্ভীরমুখেই বলিলেন, অনেক কথা এই যে, মাথার উপর দিয়ে প্রলয়ের ঝড় বয়ে গিয়েছে । রাসমণির বিস্ময়ের সীমা নাই, ভাবনার সীমা নাই ; প্রায়ু রুদ্ধকণ্ঠে বলিয়া উঠিলেন, খুলেই বল হারাণ । হারাণচন্দ্র গম্ভীরমুখে ঈষৎ হাস্য প্রকাশ করিয়া কহিলেন, নষ্টচন্দ্রের কলঙ্কের কথা জান ? আমার তাই হয়েছিল। চুরি করেছি বলে নদীরা আমাকে,—ন, আমার নামে নালিশ করেছিল । নালিশ করেছিল ? ই, নালিশ করেছিল, কিন্তু মিছে কথা কতক্ষণ থাকে ? কিছুই প্রমাণ হ’ল না— আজ মোকদ্দমা জিতে তাই বাড়ি আসছি। ঘোমটার অন্তরালে শুভদা চক্ষু মুছিল । রাসমণি নন্দীদের বহু মঙ্গল কামনা করিলেন, তাহাদিগকে সগোষ্ঠী মুক্তি দিবার জন্য দুর্গার চরণে অসুযোগ করিলেন, তাহার পর বলিলেন, কিন্তু ওরা চাকরিতে তোকে আর রাখবে কি ? হারাণচন্দ্র চক্ষু রক্তবর্ণ করিলেন—চাকরিতে রাখবে? আমি করলে তবে ত রাখবে ? হারামজাদা ভগবান নদীর এ-জন্মে আমি আর মুখ দেখব ? যদি বেঁচে থাকি তো প্রতিশোধ নেব—আমাকে যেমন অপমান করেচে, তার শোধ তুলব! রাসমণি কিছুক্ষণ ভয়-বিক্ষিত চক্ষে বীর ভ্রাতার পানে চাহিয়া থাকিয়া মৃদু মৃদ্ধ বলিলেন, তা হলে কিন্তু খরচ-পত্রের— সে ভাবনা ভেবনা দিদি-বেটীছেলে, আমার ভাবনা কি ? কালই আর এক জায়গায় চাকরি জুটিয়ে নেব । হারাণচন্ত্রের কথা যে রাসমণি সম্পূর্ণ বিশ্বাস করিলেন, তাহা নহে, তথাপি কিঞ্চিৎ আশ্বস্ত হইলেন। সম্পূর্ণ অবিশ্বাস করা অপেক্ষ কিঞ্চিৎ বিশ্বাস করিয়া এ দারুণ দুর্ভাবনার হাত হইতে নিম্নতি লাভ করিতে এ-সময়ে সকলেরই ইচ্ছা হয়। রাসমণিও ఫీ