পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (অষ্টম সম্ভার).djvu/২৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ আঁচল দিয়া তাহা মুছাইয়া দিলে, কিছুক্ষণ পরে স্বলোচনা পুনরায় বলিলেন, মায়ের উপর রাগ করিসনে মা ! পাছে এ-কথা বললে তোর অকল্যাণ হয় তাই বলতে পারলাম না ; না হলে মরণকালে হাত জোড় করে বলতাম—- হেম তাড়াতাড়ি তাহার মুখে হাত চাপ দিয়া কাদিয়া উঠিয়া বলিল, কি করলে তুমি সুখী হও—আমাকে বল, তাই করব। আমি ত কোনদিন তোমার অবাধ্য ङ्झेनि शां । মুলোচনা অনেক কষ্টে তাহার অবশ হাতখনি হেমের মাথায় রাখিয়া বলিলেন, সেই জন্যই ত পুড়ে মরছি হেম । আমার যা বলবার তা গুণীকে বলেছি, দরকার হলে সে-ই তোকে বলবে । তুই কিন্তু আজ এই কাপড়খানা তোর ছেড়ে আয় । যে কাপড় পরে এক বছর আগে এই ঘরে এই খাটের উপর এসে বসতিস, যে-সব গয়না পরে আমাকে প্রথম প্রণাম করতে এসেছিলি, আমার গুণীর দেওয়া সেই কাপড়, সেই গয়না পরে আমার সামনে আয় । এক দণ্ডের জন্তেও আমার নিজের পাপ থেকে আমায় মুক্তি দে । হেম নিঃশব্দে উঠিয়া গিয়া তাহার আদেশ পালন করিয়া ফিরিয়া আসিয়া বসিলে তাহার ওষ্ঠপ্রাস্তে যেন ঈষং হর্মের আভাস খেলা করিয়া গেল। তিনি অপেক্ষাকৃত স্বস্বভাবে বলিলেন, মা, চৌত্রিশ বছর বয়সে জামার ষে জ্ঞান কোনদিন হয়নি, সে জ্ঞান, সে বুদ্ধি এক নিমিষে হয়েছিল, যেদিন পশ্চিম থেকে ফিরে এসে তোকে প্রথম দেখি । লোকে বলে মাথায় বাজ পড়া ; কি জানি মা, সে কি-রকম, কিন্তু সেদিন আমার যে ব্যথা বেজেছিল, তার অৰ্দ্ধেক ব্যথাও যদি বজ্রাঘাতে বাজে ত সে ব্যথা আমার পরম শত্রুর জন্তেও কামনা করিনে। আমায় দিব্যি রইল হেম, এ বেশ আর খুলে ফেলিস্নে । কি জানি, কোন পাষাণ বিধবার সাজ তৈরী করে গিয়েছিল, আজ আমি অভিসম্পাত করি, তাকে যেন আমার মত আঘাত বুক পেতে সইতে হয় । না না হেম, বাধা দিসনে মা, কাল আমি আর বলতে আসব না । আজ তোকে বলি, যেন তোর বাপের কাছে থেকে তোকে দেখে স্বর্থী হতে পারি। র্তাহার আবার স্বর রুদ্ধ হইয়া আসিল । হেম আঁচল দিয়া ধীরে ধীরে চোখ মূৰ্ছাইয়া দিতে লাগিল। বাহিরে জুতার শব্দ শুনিয়া হেম মাথার উপরে কাপড় তুলিয়া দিতেই গুণী সাহেব ডাক্তার লইয়া ঘরের সামনে আসিয়া উপস্থিত হইল। স্বলোচনা দেখিতে পাইয়া অধীরভাবে বলিয়া উঠিলেন, আবার ডাক্তার কেন গুণী ? ঐখান থেকে ভিজিট দিয়ে ওকে বিদায় করে দিয়ে তুই আমার কাছে এসে একবার বোস । গুণী বলিল, মা, অস্ততঃ একবার তোমার হাতটা— না গুণী, না । আর আমাকে দগ্ধ করিসনে, যেতে দে ওকে । ՀԽԳ