পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (অষ্টম সম্ভার).djvu/৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

や3宿i জামাদের সে ভরসাও নেই। তাই সমস্ত জিনিস খুব সাবধানে নিজে না দেখে-শুনে চললে কি আমাদের চলে ? বুঝেচ ? কাত্যায়নীরও বোধ হয় ক্লেশ হইতেছিল ; এসব কথা কহিতে কহিতে সে-মুহূর্বের জন্যও হৃদয়ে একটু ব্যথা অনুভব করা নিতান্ত অস্বাভাবিক নহে। কিন্তু তৎক্ষণাৎ সে সমস্ত ঢাকা দিয়া ফেলিল। হারাণচন্দ্রের মুখখানা একটু নাড়িয়া দিয়া বলিল, যা বললাম সব বুঝেচ ? এই টাকাগুলো তোমার স্ত্রীর হাতে দিও—তবুও দু'দিন স্বচ্ছন্দে চলবে। নিজের কাছে কিছুতেই রেখে না। শুনচ ? হারাণচন্দ্র অন্যমনস্কভাবে ঘাড় নাড়িয়া বলিলে, স্থা । অনেক রাত্ৰি হ’ল, আজ আর কোথাও যেও না । এইখানেই শুয়ে থাকো । وی\ ঐসদানন্দ চক্রবর্তীকে গ্রামের অৰ্দ্ধেক লোক সদাদাদা বলিয়া ডাকিত, অর্ধেক লোক ‘সাপাগলা বলিয়া ডাকিত। এই হলুদপুর গ্রামেই তাহার বাটা। তাহার পিতা গোড়া হিন্দু ছিলেন। ইংরাজী ম্লেচ্ছ ভাষা, ইংরাজী শিখিলে ধৰ্ম্ম নষ্ট হইতে পারে এই আশঙ্কায় তিনি পুত্রকে লিখিতে পড়িতে শিখান নাই। আর প্রয়োজনই বা কি ? যে ছ’দশ বিঘা জমি আছে তাহাতে পরের চাকুরি করিতে হইবে না, তবে মিছামিছি জাত দিয়া কি হইবে ? কেহ বলিত, সে সংস্কৃত ভাষা জানে, কেহ বলিত, জানে না ; যাহা হউক এ-বিষয়ে মতভেদ আছে, কিন্তু সে যে পাগল তাহাতে আর মতভেদ নাই । আবালবৃদ্ধবনিতা সকলেই স্বীকার করে, তাহার একটু বাতিকের ছিট আছে। জমি দেখে, রামপ্রসাদী গান গাঙ্গে, মড়া পোড়ায়, এ-বাটী ও-বাটী করে, এমনি করিয়া মনের আনন্দে দিন কাটিয়া যায়। দূরসম্পর্কে এক পিসি ভিন্ন সংসারে আপনার বলিতে তাহার কেহ নাই ; তাই গ্রামশুদ্ধ লোককে সে আপনার করিয়া লইয়াছে। সকলেই তাহার আত্মীয়, সকলের সহিতই তাহার সম্পর্কের ডাক, সকল স্থানেই তাহার অবারিত দ্বার । পূর্বেই বলিয়াছি, সংসারে তাহার কেহ আপনার লোক নাই। বাল্যকালে সদানন্দর পিতা অনেক টাকা পণ দিয়া তাহার বিবাহ দিয়াছিলেন, কিন্তু ভাগ্যদোষে এক বৎসরের মধ্যেই বধুটির মৃত্যু হয়। সেই অবধি, আজ ছয় বৎসর হইল, সদানন্দ একাকী আছে। টাকা জুটিয়া উঠে নাই বলিয়াই হোক, আর ইচ্ছা ছিল না বলিয়াই হোক, সে আর বিবাহ করে নাই। তাহাদিগকে অনেক টাকা পণ দিয়া বিবাহ করিতে হইত ; কেহ বিবাহের কথা পাড়িলে সে তাহারই উল্লেখ করিয়া বলিত, অত টাকা পাব কোথায় যে বিবাহ করিব ? - ኟፃ