পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (অষ্টম সম্ভার).djvu/৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ রাখিবে না, ছলনাদিদি খুব চাহিবে, অনেক চাহিবে—তবে দুটো-একটা ফেলিয়া দিবে, আরো কত কি শত-সহস্ৰ কৰ্ম্মের তালিকা মনে মনে প্রস্তুত করিতে করিতে মাধবচন্দ্র সে-রাত্রের মত ঘুমাইয়া পড়িল । আর ললনা ? সেও সে-রাত্রের মত অদৃশ্য হইল। পিসিমা রাসমণি, জননী শুভদা, ছলনা, হারাণচন্দ্র সকলেই ডাকাডাকি করিল, কিন্তু কিছুতেই সে উপরের দ্বার খুলিল না। বড় মাথা ধরিয়াছে—-আমাকে ডাকিও না—আমি কিছুতেই উঠিতে পারিব না। পরদিন হইতে মাধবচন্দ্র একটু অন্যরকম হইয়াছে। সে একে শান্ত, তাহার উপর আরো শাস্ত হইয়াছে। ঔষধ খাইতে আর আদৌ আপত্তি করে না—এটা খাব না, ওটা দাও, ও খাব না, তা দাও, এরূপ একবারো বাহানা করে না । আজকাল সৰ্ব্বদাই প্রফুল্ল। মা যদি কখন জিজ্ঞাসা করেন, মাধু, কিছু খাবি কি ? সে বলে, দাও । কি দেব ? যা হয় দাও । - বড়দিদি কাছে বসিয়া থাকিলে ত আর কথাই নাই। দু'জনে চুপি চুপি অনেক কথা কহে, বিস্তর পরামর্শ করে ; কিন্তু কেহ আসিয়া পড়িলেই চুপ করিয়া যায়। এখন হইতে হারাণের সংসারে আর তেমন ক্লেশ নাই । যখন বড় কিছু হয় তখনই ললনা দুটো-একটা টাকা বাহির করিয়া দেয় । শুভদা জানে কোথা হইতে টাকা আসিতেছে, রাসমণি ভাবে হারাণ কোথা হইতে লইয়া আসে, হারাণ ভাবে, মন্দ কি ! যখন কোথা হইতে আসিতেছে, তখন কোথা হইতেই আমুক। আমিই বা কোথা হইতে আনিব ? তবে একটা কথা তাহার আজকাল প্রায়ই মনে হইতেছে, সে-কথাটা আফিমের মোঁতাত সম্বন্ধে । মাঝে মাঝে ভয় হয়, অভ্যাসটা বুঝি একেবারেই ছাড়িয়া যাইতেছে। আর ছাড়িলেই বা উপায় কি ? বাহাল রাখিবার মত আফিম বা কোথা হইতে যোগাইবে ? যেমন করিয়া হউক আর যাহা করিয়াই হউক পেট ভরিয়া যখন চারিট খাইতে পাইতেছি, তখন ওজন্ত আর মন খারাপ করিব না ; সময় ভাল হইলে আবার হইবে, এখন যেমন আছি cउबनझे थांकि । দিনকতক পরে সদানন্দর পিসিমাতা একদিন তাহাকে ধরিয়া বলিলেন, বাবা, আমাকে একবার কাশী দেখিয়ে নিয়ে এস ; কবে মরব কিছুই জানা নাই, অন্ততঃ এজন্মে একবার কাশী বিশ্বেশ্বর দেখে নিই।