পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (অষ্টম সম্ভার).djvu/৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্রই ললন তাহা বুঝিতে পারিত ; আহার কমিয়া গিয়াছে, দুইবেলার পরিবর্তে আজকাল বেলা চারিটার সময় এক বারে দাড়াইয়াছে ; পীড়াপীড়ি করিলে বলে, আদতে ক্ষুধা নাই। ললনা এসব দেখিত আর লুকাইয়া চক্ষু মুছিত ; কখনও কখনও ঘরে দ্বার দিয়া মাথা কুটিত । ইহাতে ফল হইবার হইলে হইতে পারিত, কিন্তু• জগতে তাহা হয় না । SWS) আজ একাদশী ৷ ললনা রন্ধনশালায় প্রবেশ করিয়া দেখিল, জননী রন্ধন করিতেছেন। চুলার ভিতর দেখিল কি একটা পদার্থ দগ্ধ হইতেছে। চিনিতে না পারিয়া বলিল, ওটা কি মা ! কি পোড়াচ্চ । চারটি সরষে ফুল ৷ ” কি হবে ? ছলনা খাবে। আজ নেয়ে আসবার সময় ক্ষেত থেকে তুলে এনেছিল । তেজে দিতে বলেছিল ; কিন্তু তেল ত নেই, তাই কলাপাত জড়িয়ে পুড়িয়ে দিচ্ছি । ললনা আর কোন কথা জিজ্ঞাসা করিল না। আহারের সময় সাধের সরিষার ফুলের আকৃতি দেখিয়া ছলনাময়ী বিষম ক্রুদ্ধ হইয়া বলিল, এই বুঝি ভাজা হয়েছে ? এ ছাই হয়েছে। শুভদা ইতস্ততঃ করিয়া ভয়ে ভয়ে বলিল, একটু পুড়ে গেছে। আমি খেতে চাইনে ; তুমি পোড়া জিনিস ভালবাস, তাই নিজের মনের মত করে পুড়িয়ে রেখেচ ! তা তুমিই খেয়ো—এই রইল। ছলনা মুখখানা তেলো ছাড়ির মত করিয়া পাতের নীচে নামাইয়া রাখিল । ছলনা যাহা বলিল তাহা নিজের বিশ্বাস-মত বলিল কি না বলিতে পারি না, কিন্তু আপনার মনোমত কোন দ্রব্য ন হইলে কর্কশ কথা বলিতে তাহার মত কেহই পারে না । অনেক গজ, গজ, করিয়া ছলনা আহার করিয়া চলিয়া যাইলে ললনা বলিল, মা, দিন দিন ছলনা মন্দ হয়ে যাচ্চে ; ওকে কিছু বল না কেন ? আমার ত ওকে কোন কথা বলতে সাহস হয় না। একটা বললে দশটা শুনিয়ে দেয় । শুভদা একটু ভাবিয়া বলিল, সব মেয়ে কি তোর মত হয় মা । হাতের পাঁচটা আঙ্গুল পাঁচ রকমের হয়। আমি খাওয়াতে পারিনে, পয়াতে পারিনে, কাজই রাগ করে দুটো কথা বললে সয়ে যেতে হয়। ●W*