পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (একাদশ সম্ভার).djvu/১১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ না বাৰু, জামার স্বচক্ষে দেখা! একেবারে নিরীক্ষণ করে দেখা ! আমার পা দুয়ে দিব্যি কর—তোর চোখে দেখা ! বামুনের পায়ে হাত দিচ্ছিল মনে থাকে যেন ! বেহারী তৎক্ষণাৎ নত হইয়া সতীশের পায়ে হাত দিয়া বলিল, সে-কথা আমার দিবা রাত্রই মনে থাকে বাৰু। আমার স্বচক্ষে দেখা । সতীশ আবার একমুহূর্ত চুপ করিয়া থাকিয়া কহিল, আচ্ছা বাসায় যা। উপেনদাকে বলিস, আজ রাত্রে আমি ভবানীপুরে যাব, ফিরব না। বেহারী বিশ্বাস করিল না, কঁদিয়া ফেলিল । সুতীশ বিস্মিত হইয়া বলিল, ও কি রে, কাদিস কেন ? বেহারী চোখ মুছিতে মুছিতে বলিল, বাবু, আমি আপনার ছেলের মত, আমাকে লুকোবেন না। আমিও সঙ্গে যাব। * সতীশ জিজ্ঞাসা করিল, কেন ? বেহারী বলিল, বুড়ো হয়েচি সত্যি, কিন্তু জাতে গোয়ালা। একগাছা হাতে পেলে এখনো পাঁচ-ছ'জনের মেয়াড় রাখতে পারি। আমরা দাঙ্গ করতেও জানি, দরকায় হলে মরতেও জানি । সতীশ শান্তভাবে বলিল, আমি কি দাঙ্গ করতে যাচ্ছি ? আহাম্মক কোথাকার! বলিয়াই চলিয়া গেল । বেহারী এবার বোধ হয় বুঝিল কথাটা মিথ্যা নয়। তখন চোখটা মুছিয়া ফেলিয়া সে প্রস্থান করিল। সতীশ ময়দানের দিকে দ্রুওপদে চলিয়াছিল। কোথায় যাইবে, স্থির করে নাই —কিন্তু কোথাও তাহাকে যেন শীঘ্ৰ যাইতেই হইবে । তাহার প্রধান কারণ সে নি:সংশয়ে অনুভব করিতেছিল, একমুহূর্তেই তাহার মুখের চেহারায় এমন একটা বিত্র পরিবর্তন ঘটিয়াছে যাহা লইয়া কাহারও সম্মুখে দাড়ানো চলে না। ময়দানের একটা নিভৃত অংশে গাছতলায় বেঞ্চ পাতা ছিল। সতীশ তাহার উপরে গিয়া বসিল এবং নির্জন দেখিয়া স্বস্তি বোধ করিল। অন্ধকার বৃক্ষতলে বসিয়া প্রথমেই তাহার মুখ দিয়া বাহির হইল, কি করা যায় ? প্রশ্নটা কিছুক্ষণ ধরিয়া তাহার দুই কানের মধ্যে অর্থহীন প্রলাপের মত ঘুরিতে লাগিল। শেষে উত্তর পাইল, কিছু করা যায় না । প্রশ্ন করিল, সাবিত্রী এমন কাজ করিল কেন ? 68 כי