পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (একাদশ সম্ভার).djvu/১১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ সেই হাসি, সেই দৃষ্টি, সেই সংযত পরিহাস, সৰ্ব্বোপরি তাহার সেই অকৃত্রিম সেবা । এমন সে তাহার এতখানি বয়সে কোথায় কবে পাইয়াছিল ? ভস্মাচ্ছাদিত বহির মত তাহার আবরণটা লইয়া খেলা করিতে গিয়া যে আগুন বাহির হইয়া পড়িয়াছে, ইহার দাহ হইতে কেমন করিয়া কোন পথে পলাইয়া আজ সে নিষ্কৃতি লাভ করিবে ! নিষ্কৃতি লাভ করিয়াই বা কি হইবে ? তাহার দুই চোখ দিয়া অশ্র ঝরিয়া পড়িতে লাগিল। এ অশ্র সে দমন করিতে চাহিল না—এ আশ্র সে মুছিয়া ফেলিতে ইচ্ছ করিল না। অশ্রী যে এত মধুর, অশ্রতে যে এত রস আছে, আজ সে তাহার পরম দুঃখের মধ্যে এই প্রথম উপলব্ধি করিয়া স্বর্থী হইল এবং যাহাকে উপলক্ষ করিয়া এত বড় স্বখের আস্বাদ সে জীবনে এই প্রথম গ্রহণ করিতে পাইল, তাহারি উদেশে দুই হাত যুক্ত করিয়া নমস্কার করিল। সতীশ আর যাই হোক—ভগবান আছেন, তাকে ফাকি দেওয়া যায় না, ছোটবড় সকলকেই একদিন তার কাছে জবাবদিহি করিতে হয়, এ কথাগুলো অসংশয়ে বিশ্বাস করিত। চোখ মুছিয়া উঠিয়া বসিয়া মনে মনে বলিল, ভগবান! কার হাত দিয়ে তুমি কখন যে কাকে কি পাঠিয়ে দাও, কেউ বলতে পারে না । আজ তোমারি হুকুমে সাবিত্রী দাতা, আমি ভিক্ষুক । তাই সে ভাল হোক, মন্দ হোক, সে বিচার আর যে-ই করুক আমি যেন না করি। আমার বুক থেকে সব জালা, সব বিদ্বেষ মুছে দাও—তার বিরুদ্ধে আমি যেন কৃতঘ্ন হয়ে না থাকি । ওদিকে জ্যোতিষসাহেবের বাড়িতে সন্ধ্যার পরে, বসিবার ঘরে সরোজিনী, জ্যোতিষ, উপেন্দ্র এবং আরও একজন ধৰ্ব্বাকৃতি গোফ-দাড়ি-কামানো গুলিভাটার মত শক্ত-সমর্থ ভদ্রলোক বসিয়াছিলেন । ইহার নাম শশাঙ্কমোহন। ইনিও বিলাত প্রত্যাগত— স্বতরাং সাহেব । অল্পদিনেই সরোজিনীর প্রতি আকৃষ্ট হইয়াছেন এবং তাহা প্রাণপণে ব্যক্ত করিতে প্রয়াস পাইতেছেন । সে প্রয়াস যে কতদূর সফলতার দিকে অগ্রসর হইতেছিল, সে শুধু বিধাতাপুরুষই জানিতেছিলেন। আজ সতীশের প্রসঙ্গ উখিত হইয়াছিল। উপেন্দ্র তাহার অসাধারণ গায়ের জোর এবং অদ্ভূত সাহসের ইতিহাস শেষ করিয়া, আশ্চৰ্য্য কণ্ঠস্বর ও তদপেক্ষ আশ্চৰ্য্য শিক্ষার কথা পাড়িয়াছিলেন। অদূরে সোফার উপর বসিয়া সরোজিনী দুই হাতের উপর চিবুক রাখিয়া ঝুঁকিয়া পড়িয়া নিবিষ্টচিত্তে শুনিতেছিল। এমনি সময়ে বেহারী ভগ্নদূতের মত ঘরে ঢুকিয়া সতীশের ভবানীপুর যাওয়ার সংবাদ ঘোষণা করিয়া দিল । , উপেন্দ্র কিছু বিস্থিত হইয়া প্রশ্ন করিলেন, তার কে আছে সেখানে ? বেহারী সংক্ষেপে "জানি না’ বলিয়াই চলিয়া গেল । সতীশের জন্যই সকলে অপেক্ষা করিতেছিল, অতএব সকলেই নিরাশ হইলেন। ఆts