পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (একাদশ সম্ভার).djvu/১২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ কিছুক্ষণ স্থির থাকিয়া অঘোরময়ী বলিলেন, বিকে একবার ডেকে দিয়ে যাব ? কিরণময়ী অন্তরস্থ সমস্ত বিদ্রোহ দমন করিয়া শাস্তভাবে বলিল, কি দরকার মা । আমি রোজই একলা রাধি—একলা থাকা আমার অভ্যাস হয়ে গেছে । বরং উনি ঘরে একলা আছেন— তার কাছে গিয়ে কেউ বসলে ভাল হয় । পীড়িত সস্তানের উল্লেখে জননী আঘাত পাইয়া ব্যস্ত হইয়া বলিলেন, তাই যাই । তুমিও একটু শীঘ্ৰ করে কাজ সেরে চলে এস মা । ইতিমধ্যে উপেন্দ্র বাড়ি ফিরিয়া গিয়াছেন, সতীশও আর একটি দিন মাত্র উপেন্দ্রর সঙ্গে হারানকে দেখিতে আসিয়াছিল—আর আসে নাই । সে নিজের ব্যথা লইয়াই বিব্রত ছিল। উপেন্দ্র তাহার অন্যমনস্ক ভাব এবং এ-বাটীতে আসিতে অনিচ্ছা জানিয়া তাহাকে আর আহবান করেন নাই, চিকিৎসা এবং অন্যান্য ব্যবস্থা একাকীই স্থির করিতেছিলেন। শুধু কলিকাতা ছাড়িয়া বাড়ি ফিরিয়া যাইবার দিন সতীশকে ডাকিয়া মধ্যে মধ্যে সংবাদ লইতে এবং তঁহাকে চিঠি লিখিয়া জানাইতে অনুরোধ করিয়া চলিয়া গিয়াছেন। আজ সতীশ ইস্কুল হইতে ফিরিয়াই উপেন্দ্রর পত্র পাইল। তিনি লিথিয়াছেন,—ভরসা করি, তোমার লেখাপড় ভালই হইতেছে । কয়দিন হারানদীর সংবাদ ন পাইয়া ভাবিত হইয়াছি। যদিও জানি, সংবাদ দিবার প্রয়োজন হয় নাই বলিয়াই দাও নাই, তথাপি র্তাহার চিকিৎসাটা কিরূপ হইতেছে, লিখিয়া জানাইবে । সতীশের পিঠে চাবুক পড়িল। সে একদিনও যাইয়া সংবাদ লয় নাই । ইতিমধ্যে ও-বাটীত কত কি ঘটিয়া থাকিতে পারে, অথচ তাহারই উপরে নির্ভর করিয়া উপীনদ বাড়ি গিয়াছেন । সে দ্রুতপদে নীচে নামিয়া গেল । বেহারী জলখাবার আনিতেছিল, ধাক্কা খাইয়া তাহার থালা ও গেলাস ছড়াইয়া পড়িল—সতীশ ফিরিয়া দেখিল না। রাস্তায় আসিয়া একখানা খালি গাড়িতে চড়িয়া বসিল এবং দ্রুত ইাকাইতে অনুরোধ করিয়া পথের দিকে সতর্ক হইয়া রহিল । তাহার ভয় ছিল পাছে চিনিতে না পারায় গলিট পার হইয়া যায়। মিনিট-কুড়ি পরে যখন গাড়ি ছাড়িয়া সে ক্ষুদ্র গলির মধ্যে প্রবেশ করিল, তখনও বেলা আছে। পায়ের নীচে খোলা নর্দমা ও চলিবার পথ, এবং মাথায় উপরে আকাশ ও আলো তখনও অন্ধকারে একাকার হয় নাই । ক্রতপদে ছটিয়া ১৩ নম্বর বাটীর সম্মুখে আসিতেই কবাট খুলিয়া গেল। কে যেন তাহারই জন্য অপেক্ষা করিয়া পথ চাহিয়াছিল। সতীশের বুকের ভিতরটা কাপিয়া উঠিল, সহসা প্রবেশ করিতে পারিল না । Ֆ ֆ ,