পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (একাদশ সম্ভার).djvu/১৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ মগ্র ছিলেন, কহিলেন, আচ্ছা বল ত ঠাকুরপো, যমের সঙ্গে এই-সব দেনা-পাওনার বঞ্চাট মিটে যাবার পরে আমার চাকরি করা উচিত, না ভিক্ষে করা উচিত। কথাটা সতীশ বুঝিতে পারিল। কহিল, উপীনাকে জিজ্ঞেস কোরে, তিনিই জবাব দেবেন। কিরণময়ী কহিলেন, জিজ্ঞাসা না করেও বুঝতে পারচি, হয়ত দয়া করে তিনি আমাকে দুটো খেতে দেবেন, কিন্তু, এই পরের উপর নির্ভর করে থাকাই ত ভিক্ষে করা ঠাকুরপো । সতীশ হঠাৎ বোধ করি প্রতিবাদ করিতে গেল, কিন্তু কথা খুজিয়া না পাইয়া চুপ করিয়া চাহিয়া রহিল। s". কিরণময়ী তাহার মনের ভাব বুঝিয়া একটুখানি হাসিয়া কহিলেন, মুখ ফুটে বললেই তা রূঢ় হয় তা জানি ঠাকুরপো, কিন্তু কথাটা যে সত্যি ! ক্ষণকাল থামিয়া কছিলেন, মনে কোরো না তোমার দাদাকে আমি চিনতে পারিনি। আমি তাকে চিনেfচ ! বুঝেচি অনাথাকে দিতে তিনি জানেন, কিন্তু শুধু দেওয়াই ত নয়, নেওয়াও ত আছে। দিয়ে কখনও দেখিনি ঠাকুরপো, কিন্তু সারাজীবন পরের মন জুগিয়ে নিতে পারা যে কম কঠিন নয়, সে-কথা যে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েচি । তথাপি সতীশ উত্তর খুজিয়া পাইল না। কিন্তু কিরণময়ীর যেন ঝোক চাপিয়া গিয়াছিল, প্রত্যুভরের অপেক্ষা করিলেন না, কহিলেন, এই পৃথিবীর সঙ্গে কারবার আমার বেশীদিনের নয়-দেনা-পাওনা চুকিয়ে নিতে এখনও ঢের বাকী। এই দীর্ঘ জীবনের হিসেব-নিকেশে দোষঘাট ভুলভ্রান্তি হতেও পারে। তখন, তিনিই বা কি বলে দেবেন, আর আমিই বা কোন মুখে হাত পাতব ? তখন ষে আবার গোড়া থেকে নিজের পথে চলতে হবে । এতক্ষণ সতীশ শ্রদ্ধার সহিত, ব্যথার সহিত তাহার ভারী আশঙ্কার কথাগুলো শুনিতেছিল, কিন্তু শেষ কথাটায় যেন খোচ খাইয়া চমকিয়া উঠিল। কহিল, ও কি কথা বৌঠান । দোষঘাট সকলেরই হয়, ভুলভ্রাপ্তি হবে কেন ? কিরণময়ী সতীশের উৎকণ্ঠিত বিস্ময় লক্ষ্য করিয়া হাসিলেন। একমুহূর্তে নিজের ব্যগ্র উত্তপ্ত কণ্ঠস্বর শাস্ত কোমল করিয়া কহিলেন, কে জানে ঠাকুরপো, আমিও ত भांछूष । হালি দেখিয়া সতীশ নিজের ভ্রম বুঝিল । মুহূর্তের উত্তেজনায় তাহার মন যে কু-অৰ্থ গ্রহণ করিতে গিয়াছিল, সে লজ্জায় মাথা ইেট করিস্থা আন্তে আস্তে কহিল, আমাকে মাপ করে বৌঠান, আমি যেমন নিৰ্ব্বোধ, তেমনি অশুচি। . কিরণময়ী জবাব দিলেন না, আবার একটু হাসিলেন মাত্র। 6פיצ