পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (একাদশ সম্ভার).djvu/১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ করতে থাকেন। পাশের ঘরেই আমার আড্ডা। হের-ফেরগুলো বেশ কায়দা করে এখনও পেকে উঠিনি বটে, কিন্তু গায়ে আমার রং ধরেচে। অসময়ে পেকে গাছতলায় পড়ে শিয়াল-কুকুরের পেটে যেতে চাইনে। তাই, এটা বাদ দিয়ে আর কিছু যদি বলবার থাকে ত বলুন, না হয় অনুমতি করুন বিদায় হই। যুক্ত-হন্ত সতীশের কথার ভঙ্গিতে সকলেই হাসিয়া উঠিল। রুষ্ট ভূপতি দ্বিগুণ উদীপ্ত হইয়া উঠিলেন। রাগের মাথায় তর্কের স্বত্র হারাইয়া গেল, এবং এমন অবস্থায় যাহা প্রথমেই মুখে আসে তাহা তর্জন করিয়া বলিয়া ফেলিলেন-আপনি তা হলে দেখছি ঈশ্বরও মানেন না । কথাটা ধে নিতান্তই অসংলগ্ন ও ছেলেমানুষের মত হইল তাঙ্গ ভূপতির নিজের কানেও ঠেকিল । সতীশ ভূপতির আরক্ত মুখের পরে একবার তীক্ষ দৃষ্টিপাত করিয়া উপেন্দ্রর মুখপানে চাহিয়া হো হো করিয়া হাসিয়া উঠিল। বলিল, ও উপনদ, ভূপতিবাবু এবারে কোণ নিয়েছেন। আমার মত দশ-বারোটা কুকুরেও এবারে আর ধেসতে পারবে না । ভূপতির প্রতি চাহিয়া বলিল, ঠিক করেচেন ভূপতিবাৰু, চোর’ ‘চোর খেলায় ছুটতে না পারলে বুড়ি দুয়ে ফেলাই ভাল । - এই অপবাদের আঘাতে আগুন হইয়া ভূপতি উঠিয়া দাড়াইতেই উপেন্দ্ৰ হাত ধরিয়া বলিলেন, তুমি চুপ কর ভূপতি, আমি এই লোকটিকে জব্ব কচ্চি। বুড়ি ছোয়া, কোণ নেওয়া, এ সব কি কথা রে সতীশ ? বাস্তবিক তোর যেরূপ সন্দিগ্ধ প্রকৃতি, তাতে সন্দেহ হতেই পারে, তুই ঈশ্বর পর্য্যন্ত মানিসনে। সতীশ গভীর বিস্ময় প্রকাশ করিয়া বলিল, হা অদৃষ্ট ! ঈশ্বর মানিনে ? ভয়ঙ্কর মানি । থিয়েটারের আড্ডা ভাঙবার পরে দুপুর-রাত্রে গোরস্থানের পাশ দিয়ে একলা ফিরবার পথে যখন বিশ্বাসের জোরে বুকের রক্ত বরফ হয়ে যায়, তোমরা ভালমামুষের দল তার কি খবর রাখ ? হাসচ কী উপীনা, ভূত-প্ৰেত মানি, আর ঈশ্বর মানিনে ? তাহার কথায় ক্রুদ্ধ ভূপতি পৰ্যন্ত হাসিয়া উঠিলেন, সতীশবাবু ভূতের ভয় করলেই ঈশ্বর স্বীকার করা হয়—এ ছুটি কি তবে আপনার কাছে এক ? সতীশ বলিল, একেবারে এক। পাশাপাশি রাখলে চেনবার জো নেই। শুধু আমার কাছেই নয়, আপনার কাছেও বটে, উপনদার কাছেও বটে, এবং ধারা শাস্ত্র লেখেন তাদের কাছেও বটে। ও এক কথাই। না মানেন ত বহুৎ আচ্ছা, কিন্তু মানলে আর রক্ষা নেই। দায়ে-স্বায়ে, আপদে-বিপদে, অনেক তরফ দিয়ে অনেকরকম করে ভেবে দেখেচি, বাগবিতণ্ডাও বিস্তর শুনেচি, কিন্তু যে অন্ধকার সেই