পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (একাদশ সম্ভার).djvu/১৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্রছ করিতে আসিয়াছিল, সেই উত্তেজনার হেতুটা আর তাহার অগোচর ছিল না। পথে আসিতে আসিতে তাহার অনেকবার মনে হইয়াছিল, তাহার সহিত মাত্র দুটি দিনের পরিচয়, সেই স্বরবালার বিশ্বাস এবং বিস্তাবুদ্ধি বাহাই হোঁক, অকারণে তাহার ঘর চড়িয়া আক্রমণ করিতে যাওয়ার মত অদ্ভুত হাস্যকর ব্যাপার আর কিছুই হইতে পারে না। স্বতরাং ফিরিয়া যাওয়াই কর্তব্য, ইহাতেও তাহার সন্দেহ ছিল না। অথচ কিছুতেই ফিরিতে পারে নাই। কিসে যেন তাহাকে ক্রমাগত টানিয়া জানিয়া হাজির করিয়া দিল। অন্যায় ! অসঙ্গত । এ-কথাও সে মনে মনে বার বার বলিল। কিন্তু, প্রেয়সী ভাৰ্য্যার যে অমূল্য ঐশ্বৰ্য্যকে উপেন্দ্র ঈশ্বরের সর্বশ্রেষ্ঠ দান বলিয়া স্বীকার করিতেও লজ্জা বোধ করে নাই, সে যে কিছুই নয়, তাহাকে সে ৰে চক্ষের নিমেষে পরাস্ত খণ্ডবিখও করিয়া তাহারই চক্ষের উপর ধুলার মত উড়াইয়া দিতে পারে, ইহাই সপ্রমাণ করিবার অদম্য আকাঙ্ক্ষণ তাহার বুকের ভিতর প্রতিহিংসার মত গড়াইয় বেড়াইতেছিল। কোনমতেই সে ইহাকে নিরস্ত করিতে পারে নাই। অথচ, গোড়া হইতেই তাহার এই খটকা বাজিয়াছিল ষে, সতীশের কাছে উপেন্দ্রর যে পরিচয় সে পাইয়াছিল, তাহাতে তাহার মন বার বার বলিতেছিল, ইচ্ছা করিলে উপেন্দ্র জবাব দিতে পারিত। কিন্তু কথাটি কহে নাই, শুধু মৃদু মৃদ্ধ হাসিয়াছে। কেন ? কিসের জন্য ? সে কি শুধু স্বরবালার কাছে লইয়া গিয়া তাহাকে একেবারে তুচ্ছ অকিঞ্চিৎ করিয়া দিবার জন্য ? কিন্তু স্বরবালা যদি কোন উত্তর না দেয় ? স্বামীর মত অমনি মুখ টিপিয়া হাসিয়া চুপ করিয়া থাকে ? কি করিয়া সে তাহার বিজয়-পতাকা প্রতিষ্ঠিত করিবে ? এমনি ভাবিতে ভাবিতে যখন সে সরোজিনীর পিছনে পিছনে স্বরবালার ঘরে আসিয়া প্রবেশ করিল, তখন মেঝের উপর বসিয়া কাশীদাসী মহাভারত হইতে ভীষ্মের শরশয্যা পড়িয়া স্বরবালা কাদিয়া আকুল হইয়া উঠিয়াছিল। অকস্মাৎ কিরণময়ীকে দেখিয়া শশব্যস্তে বই মুড়িয়া চোখ মুছিয়া ফেলিল, এবং উঠিয়া দাড়াইয়। তাহার হাত দুটি ধরিয়া পরম সমাদরে কহিল, দিদি এস । সেইখানে কাপেটের উপর বসাইয়া বলিল, আমি কাল তোমার ওখানে যাব মনে করেছিলুম দিদি। - কিরণময়ী কহিল, আমিই তাই আজ এলুম ভাই। উপেন্দ্র অদূরে একটা চৌকি টানিয়া লইয়া বসিয়াই কহিল, কান্না হচ্ছিল—ওটা মহাভারত বুঝি ? মুরবালা মহা লজ্জায় আঁচল দিয়া নিজের চোখ দুটি ক্রমাগত মুছিতে লাগিল। . ' ১৮২