পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (একাদশ সম্ভার).djvu/২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চরিত্রহীন ঘন্টা-দুই পরে ফিরিয়া আসিয়া বলিল, কি কাও বলুন ত! আজো পাদমেকং ন গচ্ছামি না কি ? সতীশ চুপ করিয়া রহিল। সাবিত্ৰী বলিল, নটা বেজে গেছে যে ! সময় উত্তীর্ণ হইবার সংবাদে সতীশ লেশমাত্র উদ্বেগ প্রকাশ না করিয়া বলিল, বাজুক গে—আমার ভাল লাগচে না । এইসকল অঙ্গায় আলঙ্গ, বৃথা সময় নষ্ট সাবিত্রী একেবারে দেখিতে পারিত না । তাই সে কিছুদিন হইতেই ভিতরে ভিতরে ক্রুদ্ধ এবং অসহিষ্ণু হইয়া উঠিতেছিল। একটু রুক্ষস্বরেই প্রশ্ন করিল, বলি কি ভাল লাগচে না ? পড়তে যাওয়া ? সতীশ নিজেও মনে মনে বিরক্ত হইয়া উঠিতেছিল—জবাব দিল না। তাহার মুখের পানে চাহিয়া সাবিত্রী ইহা বুঝিল এবং ক্ষণকাল মৌন থাকিয়া কণ্ঠস্বর মৃন্থ করিয়া বলিল, লেখাপড়া ভাল লাগচে না! এখন ভাল লাগচে বুঝি মেয়েমানুষের আঁচল ধরে টানাটানি করা ? যান আপনি স্থলে। অনর্থক বাসায় বসে থেকে উপত্ৰব করবেন না । - - তাহার তিরস্কারের মধ্যে যদিচ আন্তরিক স্নেহ ও একান্ত মঙ্গলেচ্ছা ব্যতীত আর কিছুই ছিল না, কিন্তু কথার ভঙ্গীটী সতীশের সর্বাঙ্গে যেন বিছুটি মাখাইয়া দিল । দেখিতে দেখিতে চোখ-মুখ তাহার ক্রোধে রাঙা হইয়া উঠিল । বলিল, যা মুখে আসে তাই যে বল দেখচি ? প্রশ্রয় পেলে শুধু কুকুরই মাথায় ওঠে না, মানুষকেও মনে করে দিতে হয় । এ যে গালি-গালাজ ! সাবিত্রী মুহূৰ্ত্তকাল চুপ করিয়া থাকিয়া কণ্ঠস্বর আরো নত করিয়া বলিল, হয় বই কি সতীশবাবু! না হলে আপনাকেই বা মনে করে দিতে হবে কেন, এটা ভদ্রলোকের বাসা, বৃন্দাবন নয় । বলিয়াই দ্রুতপদে বাহির হইয়া গেল। দুঃসহ বিস্ময়ে সতীশ স্তম্ভিত হইয়া রহিল । সাবিত্রী যে তাহাকে এমন করিয়া বিধিতে পারে, এ-কথা সে ত মনে স্থান দিতেও পরিত না । কতক্ষণ একভাবে বসিয়া থাকিয়া সে উঠিয়া দাড়াইল এবং কোনমতে জানাহার সম্পন্ন করিয়া লইয়া পড়িবার ছলে বাহির হইয়া গেল । সেদিন সমস্তদিন ধরিয়া তাহার অপমানাহত ক্ষুদ্ধ চিত্ত তাহার প্রবৃত্তিকে শাসন করিতে লাগিল এবং যতই সে নিজের এই অভাবনীয় অদ্ভুত ব্যবহারের কোন তাৎপৰ্য্য খুজিয়া পাইল না, ততই তাহার মনের মধ্যে একটা কথাই বারংবার জানাগোনা করিয়া দাগ কাটিতে লাগিল । কেন যে সে আঁচল ধরিয়াছিল, কি কথা তাহার বলিবার ছিল, এবং সাবিত্রী অমন করিয়া পলাইয়া না গেলে সে কি বলিত, »ዓ .

      • {-\o