পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (একাদশ সম্ভার).djvu/২৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰছ কিরণ কহিত, ঠিক তাই; কিন্তু কি করিয়া জানিব, আমার কাজে সংসারে স্বখের সমষ্টি বাড়িতেছে ? স্বখের চেহারা ত সকলের কাছে এক নয় । হারান তাহার জ্যোতিহীন চোখের দৃষ্টি ক্ষণকালের জন্য ফল-মাখানো অন্ধকার কড়ি-বরগার দিকে নিবন্ধ করিয়া বলিত, খণ্ড খণ্ড করিয়া দেখিলে এক নয় বটে, কিন্তু সমগ্রভাবে এক । তোমাকে তাহারি উপরে বিচার করিতে হইবে। কিরণময়ীর কাছে স্বখের কোন রূপই স্বম্পষ্ট নয়, সে অসহিষ্ণু হইয়া বলিয়। উঠিত, ‘খণ্ড খণ্ড করিয়া’, ‘সমগ্র করিয়া', ও-সব কথার কথা। নিজের কিলে স্বখ হয়, এইটিই বড় জোর মান্বযে বুঝতে পারে ; তাও আবার সব সময়ে সব অবস্থায় ঠিকমত পারে না । যখন নিজের সম্বন্ধেই মান্তষ নিভুল নয়, তখন সমস্ত জগতের দায় হাতে করতে যার সাংস হয় হোক, আমার হয় না। ওই, ওপারের জুটমিলের কাজীরা হয়ত মনে করে, যদি সম্ভব হয়, কাশীর সমস্ত মন্দিরগুলো পৰ্য্যস্ত ভেঙে দিয়ে পাটের কল তৈরী করতে পারলেই মানুষের মুখের মাত্রা বাড়বে, কিন্তু সবাই কি তাই মনে করবে। মুখ জিনিসটি যে কি, এ যতক্ষণ না তুমি আমাকে বুঝিয়ে দিতে পারবে, ততক্ষণ আমি তোমার কোন কথাই শুনব না, বলিয়া কিরণময়ী যাইবার উপক্রম করিতেই হারান হাত ধরিয়া বলিতেন, একটু বসে। এত পড়াশুনার পরেও যদি তুমি এত অল্পেই রেগে ওঠে, তা হলে সমস্ত মিছে হয়ে যায়। দেখ কিরণ, আমি তোমাকে সত্যিই বলি—মুখ জিনিসটি যে কি, আমি ঠিক জানিনে। কোন দেশে কেউ কখনও জেনেছিল কি না ভাও আমার জানা নেই—ওটা বোধ হয় জানাই যায় না। আমাদের দেশে বহু পূর্বেই তিন রকম দুঃখ-নিবৃত্তির চেষ্টা হয়ে গেছে—ও তিনটে বাদ দিয়ে যে জিনিসটি পাওয়া যায়, তাই যে মুখ—তাও বলা চলে না। প্রত্যুত্তরে কিরণময়ী অত্যন্ত অসহিষ্ণু হইয়া বলিয়া উঠিত, কিছুই যখন বলা চলে না, তখন কারো স্থখের কল্পনাকে পরিহাস করাও যেমন অসঙ্গত, সাধারণভাবে সংসারে স্বখের পরিমাণ বাড়িয়ে তোলার চেষ্টাও তেমনি ক্ষ্যাপামি । ভাল-মন্দ মেপে দেবার পূৰ্ব্বেই তোমার তুলাদণ্ডটির দ্বগুটি নিভূল হওয়া চাই। সেইটি নিভুল করবে ষে তুমি কোন আদর্শে, আমি তাই ত ভেবে পাইনে। হারান ক্ষণকাল চুপ করিয়া থাকিয়া হতাশ হইয়া বলিতেন, কিরণ, জানি তোমার মনের গতি কোন দিকে ঝুকে আছে। কিন্তু, যতদিন তুমি পরকালের কল্পনা, আত্মার কল্পনা, ঈশ্বরের কল্পনা, প্রভৃতি জঞ্জালগুলি মনের মধ্যে থেকে পরিষ্কার করে ঝেটিয়ে না ফেলতে পারবে, ততদিন সংশয় তোমার থেকেই যাবে। স্বর্থই যে জীবনের শেষ উদ্বেগু এবং স্বর্থী হওয়াই যে জীবনের চরম সার্থকতা, একথা বুঝেও বুঝবে না। কেবলই মনে হতে থাকবে, কে জানে, হাত বা আরো ३è9