পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (একাদশ সম্ভার).djvu/২৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ । জগৎতারিণী মুখ তুলিয়া চাছিলেন। তাছার মনের সমস্ত জাগুন একমুহূর্তেই নিবিয়া জল হইয়া গেল। ক্ষশকাল গভীর স্নেহে পুত্রমূখ নিরীক্ষণ করিয়া নিশ্বাস ফেলিয়া বলিলেন, না বাছা, তুই আমাদের কালীর বাড়িটা খালি করে দিতে চিঠি লিখে দে । আমি যে চিরকাল উপস্থিত থেকে নিজের মত নিয়ে তোঁদের বিত্রত করে রাখব, সেটা উচিতও নয়, দরকারও নয় । জ্যোতিষ হাসিয়া বলিল, তাই ভাল মা, চল সবাই গিয়ে কাশীতে থাকা যাক । মাতা-পুত্রে উক্ত কথোপকথন কলিকাতার বাটতে যেদিন হষ্টয়াছিল তাহার কিছুদিন পরেই উপেন্দ্র সতীশকে লইয়া জ্যোতিষের বাটীতে জাসিয়া উপস্থিত হইয়াছিলেন । ইহার পরের ঘটনা পাঠকের অবিদিত নাই । জগৎতারিণী সতীশকে দেখিলেন। তাহার গলায় মোট পৈতা, সে সন্ধ্যা অাহিক করে, সে মোসলমানের ছোয়া পাউরুটি বিস্কুট খায় না, সে শ্ৰীমান, নিষ্ঠাবান, তাহার পিতার অগাধ টাকা—জগৎতারিণী একেবারে মুগ্ধ হইয় গেলেন । তাছার পরে ক্রমশঃ যখন আভাসে ইঙ্গিতে অনুভব করিলেন, সে বিলাতে গিয়া পাশ না করিলেও, এমন কি এতগুলা কুসংস্কার থাকা সত্ত্বেও মেয়ের মনে অশ্রদ্ধার ভাব নাই, কি জানি হয়ত বা সে মনে মনে—তখন হইতে জগৎতারিণীর চোখে সংশয়ের চেহারা আবার পরিবর্ধিত এবং এতকালের পুীভূত বেদনাও সহজ হইয়া উঠিবার পথ পাইল । সতীশের মুখের মাতৃসম্বোধনও তাহার ভাগ্যে ঘটিল। কিন্তু, তার পরে বহুদিন পর্য্যস্ত সতীশের আর দেখা ছিল না । ইহার প্রত্যেক দিনটিই জগৎতারিণীকে বিধিয়া গিয়াছে, তথাপি নিজে উদ্যোগী হইয়া এ-সম্বন্ধে কোন উপায়ই খুজিয়া ৰাহির করিবার প্রয়াস করেন নাই । তাহার বড় একটা ভয় ছিল, পাছে চেষ্টা করিতে গেলেই একটা অত্যন্ত মন্দ সংবাদ শুনিতে হয় । তিনি মনে মনে জানিতেন, তাহার নিজের কন্যার মতামতের উপরেই শুধু বিবাহের সমস্ত ফলাফল নির্ভর কয়ে না। কারণ সতীশের বৃদ্ধ পিতা এখনও জীবিত আছেন । কি জানি তিনি কি বলিবেন । তা ছাড়া সতীশ নিজেই যে বিলাতফেরতের বাড়িতে বিবাহ করিতে ভয় পাইয়া পিছাইয়া যাইবে না, তাহারও বিশেষ কোন নিশ্চয়ত ছিল না । এমনি করিয়া অনেকদিন অনেক দুঃখ ও দুশ্চিস্তায় কাটাইয়া সেদিন হঠাৎ যখন বৈম্ভনাথে আসিয়া দেখিতে পাইলেন সতীশ বসিয়া গল্প করিতেছে, তখন আনন্দে তাহার চোখে জল জাসিয়া পড়িল । সতীশ কাছে .জালিয়া প্রণাম করিয়া পদধূলি লইল । লে কলিকাতা হইতে পালাইয়া জালিয়া অজ্ঞাতবাস করিতেছিল। সরোজিনীই ኟፃቁ