পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (একাদশ সম্ভার).djvu/২৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ সম্পূর্ণ বিশ্বাস করিতে পারেন নাই। বস্তুত, তাহাকে দোষ দেওয়াও যায় না। তাহার হিন্দু আচারভ্রষ্ট ছেলে-মেয়ের যে সতীশের আচাৰ্বপরায়ণতা প্রীতির চক্ষে দেখিতে পারে, এ-কথা তিনি হৃদয়ের মধ্যে গ্রহণ করিতে পারিতেন না । মেয়েকে কটক্তি করিণ। তিনি রান্নাঘরে প্রবেশ করিয়া ঝিকে রান্নার আয়োজন ঠিক করিয়া রাখিতে আদেশ দিয়া স্বানে চলিয়া গেলেন। কিন্তু ঘন্ট-খানেক পরে ফিরিয়া আসিয়া কন্যার প্রতি চাহিয়া জননীর চক্ষু জুড়াইয়া গেল । ইতিমধ্যে তাড়াতাড়ি সে স্বান সারিয়া লইয়া পট্টবাস পরিয়া মায়ের রান্নাঘরে ঢুকিয়া অপটুইস্থে বঁটতে তরকারি কুটিতেছিল এবং ঝি অদূরে বসিয়া দেখাইয়া দিতেছিল। ;" জগৎতারিণী নীরবে ক্ষণকাল: চাহিয়া থাকিয়া বলিলেন, হিন্দুর মেয়ের যে জার কোন পোষাকেই সাজে না, তোকে দেখে আজ তা টের পেলুম বাছা! তোর পানে চেয়ে এত আহলাদ আর আমার কোনদিন হয়নি । সরোজিনী গঙ্গায় মুখ নত করিয়া কাজ করিতে লাগিল ; মা তাহাকেই খোচ দিয়া বলিতে লাগিলেন, আমি সব বুঝি মা, সব বুঝি। তা সে যতই পাশ করুক বাদর ছাড়া আমি তাকে কিছুই বলিনে। আর যার ইসারা পেয়েই কেন না বেহায়াটা আবার ফিরে আস্বক, আমি থাকতে তা হলে না, তা সত্যি করে বলে দিচ্ছি বাছা । একটুখানি স্থির থাকিয়া পুনরায় কছিলেন, জোঙিব বলে, ছেলেবেলায় যে যেমন শিক্ষা পেয়ে আসে, মনের টানটা তার সেইদিকেই যায় । কিন্তু তাই বা সত্যি হবে কেন ? দিন রাত হাট-কোট পরে না থাকলে পছন্দ হবে না, এই বা কোন শাস্ত্রে লেখা আছে মা ? আয়োজন সম্পূর্ণ করিয়া লইয়া জগৎতারিণী রাধিতে বসিয়া এক সময়ে কহিলেন, আমার মনের বাধন ভগবান যদি পূর্ণ করেন, তুই দেখিস দিকি বাড়), তাতে তোর ভালই হবে । সরোজিনী আনতমুখে মায়ের মনের বাসনা স্পষ্ট শুনিবার প্রত্যাশায় উৎকর্ণ হইয়া রহিল ; জগৎতারিণী আর তাহা প্রকাশ করিয়া বলিলেন না, নিজের মনে রাধিতে লাগিলেন । তিনি নীরবে মনে মনে কি আলোচনা করিতে লাগিলেন সরোজিনী তাহা বুঝিল এবং হাট-কোটধারী সম্বন্ধে যে মজ্জাকর অপবাদের ইঙ্গিতে তাহাকে পুনঃ বিদ্ধ করিলেন তাহারও প্রতিবাদ করা কঠিন ছিল না, কিন্তু নিরতিশয় অসহিষ্ণু প্রকৃতি জগৎতারিণীকে কোন কথাই শেষ পৰ্য্যন্ত শুনানো যায় না জানিয়াই সে গুৰু হইয়া বলিয়া রহিল। Հն