পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (একাদশ সম্ভার).djvu/৩০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ বেহারী হাত দিয়া চোখ মুছিয়া বলিল, মা আমার যেদিন রাখালবাবুর মেসে দাসী-বৃত্তি করতে এলেন, তখন মাগুষগুলো সব দেখে অবাক হয়ে গেল। মুখে যেন হাসিটি লেগেই রয়েচে । রাখালবাবু ম্যানেজার, আর আমি ত চাকর, কিন্তু মায়ের কাছে সবাই সমান—সবাইকে সমান যত্ন । একাদশীর দিন কাঠ-ফাটা উপোস করেও কখনও মায়ের মূখ ব্যাজার দেখিনি দিদিমণি । বৃদ্ধ যেন সমস্ত হৃদয় দিয়া কথা কহিতেছিল। তাই, এই তাহার অকৃত্রিম ভক্তিউচ্ছ্বাসে সরোজিনী মুগ্ধ হইয়া গেল এবং তাঙ্গর বিদ্বেষের জালাও যেন গলিয়া অর্ধেক ঝরিয়া পড়িল । বেহারী কহিতে লাগিল, দিদিমণি, শাস্তরে লেখা আছে, মা-লক্ষ্মী একবার কি যেন একটা অপরাধ করে নারায়ণের হুকুমে দাসী-বৃত্তি করেছিলেন, আমার মাও যেন ঠিক তেমনি কোন দোষে চাকরি করতে এসে নানান দুঃখ পেয়ে শেষকালে চলে গেলেন । যেদিন চলে গেলেন, সেদিনটা আমার বুকের মাঝে আজও যেন গাঁথা হয়ে আছে দিদিমণি ! সরোজিনী আস্তে আস্তে প্রশ্ন করিল, তিনি এখন কোথায় আছেন বেহারী ? বেহারী এ-প্রশ্নের সহসা উত্তর দিল না, মুখপানে চাহিয়া চুপ করিয়া বৃছিল। সরোজিনী পুনরায় জিজ্ঞাসা করিল, জান না বেহাৰী ? বেহারী এবার ঘাড় নাড়িয়া বলিল, ঠিক জানিনে বটে, কিন্তু তবুও জানি । কিন্তু সে-কথা জানাতে যে মায়ের মানা আছে দিদিমণি, আমি ত বলতে পারব না ! সরোজিনী জিজ্ঞাসা করিল, মানা কেন ? মান যে কেন, তাহ বেহারী নিজেও ভাবিয়া ঠিক করিতে পারিত না । তথাপি এই নিষেধ চিরদিন মান্ত করিয়া চলা, সে কেমন আছে জানিতে না পাওয়া, তাহাকে এ-জীবনে আর একবার চক্ষে দেখিতে না পাওয়া, এ-সকল বেহারীর পক্ষে কত দুরূহ, তাহা সে শুধু নিজেই জানিত। বিশেষ করিয়া যখনই কোন কথাবার্তার তাহার মায়ের বিরুদ্ধে সতীশের তীব্র কুৎসিত ইঙ্গিত প্রকাশ পাইত, তখন সমস্ত কথা ব্যক্ত করিয়া ফেলিতে তাহার মনের মধ্যে আবেগের ঝড় বহিয়া যাইত, কিন্তু তবুও বুড়া আজ পর্য্যন্ত তাহার শপথ ভঙ্গ করে নাই। যদি কোনদিন অসহ হইয়াছে, তখনই সে এই কথাই স্মরণ করিয়াছে যে, সাবিত্রী যখন নিজে এতবড় কলঙ্ক নীরবে বহন করিতেছে, তখন নিশ্চয়ই ভিতরে এমন কিছু একটা আছে, যাহা তাহার বুদ্ধির অগোচর। সাবিত্রীর প্রতি তাহার বিশ্বাস ও শ্রদ্ধার অন্ত ছিল না ! কিন্তু, এখন আর একজন যখন সে-কথা জানিবার জন্য ঔংস্থক্য প্রকাশ করিতে লাগিল, তখন সমস্ত ব্যাপারটা বলিয়া ফেলিত তাহার প্রাণটাও আকুলি-বিবুলি ९**