পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (একাদশ সম্ভার).djvu/৩০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

छब्रिजशैन মহেশ্বরী তাহার বুকের উপর উপুড় হইয়া পড়িয়া কাদিয়া উঠিলেন, কিন্তু মুখ দিয়া একটা কথাও উচ্চারণ করিতে পারিলেন না । এমনি করিয়া আরও চার-পাচদিন কাটিল, তাহার পর একদিন সকালে স্বামীর কোলের উপর মাথা রাখিয়া, সমস্ত পাড়াটা শোকের সাগরে মগ্ন করিয়া দিয়া সতীসাধী স্বর্গে চলিয়া গেল । উপেন্দ্র শাস্ত স্থিরভাবে পত্নীর শেষ কৰ্ত্তব্য সমাপন করিয়া মহেশ্বরীকে লইয়া ধাড়ি ফিরিয়া আসিলেন । উপেন্দ্রর পিতা শিবপ্রসাদবাবু পুত্রের জন্ত অত্যন্ত উৎকণ্ঠিত হইয়াছিলেন, কিন্তু এখন ছেলের মুখ দেখিয়া অনেকটা আশ্বস্ত হইলেন । মনে মনে বলিলেন, না, যতটা ভয় পেয়েছিলাম সে-রকম নয়। এমন কি, তিনি অচিত্ৰভবিষ্যতে আর একটি টুকটুকে বধু ঘরে আনিবার আশাও হৃদয়ে স্থান দিলেন । কিন্তু অন্তৰ্য্যামী বোধ করি অলক্ষে থাকিয়া বুদ্ধের জন্য সেদিন দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিলেন । 豪 দিন-কয়েক পরেই উপেন্দ্রকে শামূলা মাথায় দিয়া কোর্টে বাহির হইতে দেখিয়া শিবপ্রসাদ অত্যন্ত তৃপ্তি বোধ করিলেন । এমন কি, পুলকের আতিশয্যে পুত্রকে কিছুক্ষণের জন্য কাছে ডাকিয়া সংসারের অনিত্যতা সম্বন্ধে অনেক হিত-কথা কহিয়া অবশেষে বলিলেন, উপীন, তোমাকে আর বোঝাব কি বাবা, তুমি নিজেই সমস্ত জানো, সমস্ত বোঝে । এ সংসারে কিছু চিরস্থায়ী নয়—আজি যা আছে, কাল তা নেই, কাল যা আছে, আজ তা লেই--কেউ কারো নয় সব মিছে, সমস্তই মায়ার খেলা ! এই কথাটি সৰ্ব্বদ মনে রেখো বাবা, কখন আখের নষ্ট ক’রো না। প্রাণপণে উন্নতি করার এই ত সময় । কে কার ? শাস্ত্রে আছে চলাচলমিদং সৰ্ব্বং কীৰ্ত্তিৰ্ধস্ত স জীবতি ; অর্থাৎ কি না, মান বল, সন্ত্রম বল সমস্তই হচ্ছে টাকা । টাকা রোজগারের ওপরেই সমস্ত নির্ভর । দেখ না, সতীশের বাব। কি-রকম টাকাটা রেখে গেলেন বল দেখি ? বলিয়া গম্ভীরভাবে মাথা নাড়িতে লাগিলেন। উপেন্দ্র আনত-মুখে নিঃশকে সমস্ত শুনিয়া যে আজ্ঞ বলিয়া কাছারি চলিয়া গেল । - আদালতে সতীশের দাদার সঙ্গে সাক্ষাৎ হইল, তিনি এই দুর্ঘটনার জন্য অত্যন্ত দুঃখ প্রকাশ করিয়া অবশেষে সতীশের কথা পাড়িলেন। উপেন্দ্রর ধারণা ছিল যে, সতীশ পিতার মৃত্যু হইতেই বাড়িতেই আছে, কিন্তু এখন শুনিতে পাইল যে, সে বাড়িতেই আছে বটে, কিন্তু এখানের নহে দেশের । টুম্বাবু সতীশের বৈমাত্রেয় বড় ভাই । কোনদিন তাহাকে স্বনজরে দেখেন নাই—এক বাড়িতে বাস করিয়া ও কখনো তাহার একটা সংবাদ পর্য্যস্ত রাখার প্রয়োজন বোধ করেন নাই । বস্তুত: ३**