পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (একাদশ সম্ভার).djvu/৩১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ নাক দিয়া বেহারীয় ঝর ঝর করিয়া রক্ত ঝরিয়া পড়িল, এবং একমুহূর্তেই তাহার হৃদয়ের কোন এক অজ্ঞাত স্থান হইতে চল্লিশ বৎসর পূৰ্ব্বেকার গরম রক্ত একেবারে মগজে চড়িয়া গেল । সে ঘরের কোণ হইতে ‘বাবা’র চারি হাত দীর্ঘ লোহার ত্রিশূল চক্ষের নিমেষে টানিয়া লষ্টয়া বাবা’র মাথার উপর উদ্যত করিয়া ধরিল । ভয়ে দুই হাত স্বমুখে তুলিয়। বাবা’ কুকুরের মত চীৎকার করিয়া উঠিলেন, এবং সেই অমান্তষিক চীৎকারে বেহারীর নিজেরও চমক ভাঙ্গিয়া গেল । সে হাতের ত্রিশূলটা যথাস্থানে রাখিয়া দিয়া নাকের রক্ত মুছিতে মুছিতে চলিয়া গেল । ঘণ্ট-খানেক পরে সতীশ জিজ্ঞাসা করিল, সত্যি ? বেহারী বলিল, ই । কিন্তু সে নিজের রক্তপাতের উল্লেখ করিল না। সতীশ পলকমাত্র স্থির পাকিবা বলিল, তোকে এ-বাড়িতে থাকতে দিতে আর পারব না। কিন্তু তেকে জবাবও দেব না। শ-দুই টাকা নিয়ে তুই বাড়ি যা, তোর মাইনে আমি মাসে মাসে তোর বাড়িতে পাঠিয়ে দেব। বেহারী নতমুখে ঘাড় নাড়িয়া কহিল, যে আজ্ঞে । সে ক্ষোভ প্রকাশ করিল না, ক্ষমা ভিক্ষা চাহিল না, দুই শত টাকা উত্তরীয় পাস্তে বাধিয়া লইয়া প্রভুর পায়ের ধূলা মাথায় গইয়া সন্ধ্যার পূৰ্ব্বেই গ্রাম ত্যাগ করিয়া চলিয়া গেল । সতীশ উপরের বারীন্দী হইতে যতক্ষণ দেখা গেল তাহার পানে চাহিয়া রহিল । ক্রমে বিধু পালের দোকানের আড়ালে তাহার দেহটা যখন অদভ হইল তখন শুধু একটা নিশ্বাস ফেলিয়। বলিল, যাক-এতদিনে বেহারীটাও গেল । এবার আশ্বিনের প্রথম সপ্তাহেই মহামায়ার পূজা । এখন তাহার দেরি ছিল, কিন্তু সতীশের বন্ধু-মহলে ইহার মধ্যে আলোচনা উঠিয়াছে, এবার মায়ের কি কি করা চাই । মহাষ্টমীর জন্য এখন হইতেই যে প্রস্তুত হওয়া কৰ্ত্তব্য । কিন্তু ভদ্রের মাঝামাঝি ম্যালেরিয়ার প্রকোপ অত্যন্ত বৃদ্ধি পাইল ; এমন কি, দুই-চারিটি সান্নিপাতিক জরের জন্যও ডাক্তারবাবুর বঁাটাইটি আরম্ভ হইয়া গেল । আজ কয়দিন হইতেই সতীশের দেহটা তেমন ভাল বোধ হুইতেছিল না । বেহারী যেদিন চলিয়া গেল সে-রাত্রে জরের লক্ষণ স্পষ্ট অনুভব করিল। ইয়ত একাদশীর জন্ত হইয়া থাকিবে বলিয়া সে পরদিন সকালে উড়াইয়া দিতে গেল, কিন্তু যাহা বাস্তব, যাহার ভার আছে, তাহাকে অত সহজে উড়ানো চলে না । সমস্তদিন ধরিয়া তাহাকে মানিতেই হইল যে, তাহার দেহ স্বস্থ নয়। তিনদিন পরে, পূৰ্ব্বপ্রথামত আজিকার চতুর্দশী রাজিতেও ঘটা করিয়া পূজার আয়োজন হইয়াছিল, কিন্তু সতীশ স্বয়ং যোগ দিতে এবার অস্বীকার করিল। voeà